অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সাহায্য করতে রাজ্য সরকার এক নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলায় তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ পুষ্টিকর খাবারের প্যাকেট বিলি করা হবে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। এই প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। খাদ্য প্যাকেট তৈরি ও পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে আহ্বান জানিয়ে ইতিমধ্যেই দরপত্র ডাকা হয়েছে। বেছে নেওয়া সংস্থাগুলিকে শুধু খাবার তৈরি করলেই চলবে না, প্যাকেট করে সময়মতো নির্দিষ্ট এলাকার শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতেও হবে।
আরও পড়ুন: ছত্রাকে ঢাকা, কিলবিল করছে লার্ভা, সেই খাবারই খেতে দেওয়া হল স্কুলের পড়ুয়াদের!
এই কর্মসূচি মূলত যেসব এলাকায় শিশু অপুষ্টির হার বেশি, সেসব জায়গায় চালু হচ্ছে। তালিকায় রয়েছে ৭ টি জেলা- বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলা। মূলত গ্রামের এবং আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতেই অপুষ্টির হার বেশি। বহু বছর ধরে সেখানে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের অভাব রয়েছে। প্রতিটি খাবার প্যাকেটে কী কী থাকবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত এখনও সরকার জানায়নি। তবে সরকারি সূত্রের দাবি, প্রতিটি প্যাকেটে নির্দিষ্ট ক্যালোরি ও প্রোটিনের মাত্রা বজায় রাখা হবে। শিশুদের বয়স, ওজন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির কথা মাথায় রেখেই খাদ্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পুরো সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে। শিশুদের কাছে খাবার পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত গুদামজাত করা, প্যাকিং এবং পরিবহনের সব স্তরেই মান রক্ষার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক জানান, প্রতিটি ব্লকে যেসব শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত, সেগুলিকে চিহ্নিত করে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হবে। শিশুরা নিয়মিত যাতে খাবার পায় এবং কোনওরকম ঘাটতি না থাকে সেদিকে নজর দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগ রাজ্য সরকারের অন্যান্য পুষ্টি প্রকল্পের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (আঙ্গনওয়াড়ি) বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে যে ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়, তার সঙ্গেই যুক্ত থাকবে এই প্যাকেট বিতরণ। সরকার মনে করছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। অপুষ্টি শুধু স্বাস্থ্য নয়, একটি সামাজিক সমস্যা। তাই সেই সমস্যার সমাধানে তৃণমূল স্তর থেকেই হস্তক্ষেপ শুরু করতে চায় রাজ্য। সরকারি এক আধিকারিকের কথায়, পুষ্টির ঘাটতি শুধু মেটানো নয়, বরং শিশুদের যাতে দীর্ঘমেয়াদী সুস্থভাবে বড় হয়ে ওঠার একটা ভিত গড়ে তোলা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।