সামর্থ্য তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু, সখ ছিল প্রবল! এবং সেই সখ পূরণের জন্য পরিশ্রম করে উপার্জনের কথা ভাবেননি কুমারটুলি ঘাটে ট্রলি ব্যাগে দেহ উদ্ধারের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বছর চৌত্রিশের ফাল্গুনী ঘোষ। বরং, তিনি বেছে নিয়েছিলেন অপরাধের রাস্তা! আর, তাঁকে সেই বিপথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন তাঁরই মা আরতি ঘোষ!
মধ্যমগ্রামে সুমিতা ঘোষের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নেমে এমনটাই ইঙ্গিত পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের দাবি, ফাল্গুনীর সোনার প্রতি প্রবল আসক্তি রয়েছে। এর আগেও মামীশাশুড়ির সোনার গয়না ও নগদ চুরি করে হাজতবাস করতে হয়েছে তাঁকে।
এছাড়াও, শ্বশুরবাড়ি (অসমে) ছেড়ে চলে আসার পর ফাল্গুনী মধ্যমগ্রামে একটি সাদামাটা ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন। তাঁর মা আরতিও মেয়ের সঙ্গেই থাকতেন বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, ফাল্গুনীর এই সাদামাটা জীবন পছন্দ ছিল না। তিনি নিজের একটা ফ্ল্যাট কিনতে চাইছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। অথচ, ফ্ল্যাট কেনার টাকা তাঁর ছিল না।
তথ্য বলছে, ফাল্গুনীর মধ্যমগ্রামের এই ভাড়া বাড়িতে নাকি মাঝেমধ্যেই আসতেন তাঁর পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষ। অথচ, ফাল্গুনীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সুমিতা ভাইপোর বউয়ের কাছে আসতেন। তিনি নিজেও ছিলেন একা মানুষ, ডিভোর্সি।
জানা গিয়েছে, সুমিতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো টাকা ছিল। তাঁর সোনার গয়নাও ছিল বেশ কিছু। এমনকী, মৃত্যুর সময়েও খুব সম্ভবত তাঁর হাতে সোনার বালা এবং গলায় সোনার হার ছিল। যে গয়নাগুলি খোয়া গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খুনের পর হয়তো ফাল্গুনী আর তাঁর মা আরতিই সেগুলি গায়েব করেছেন। যদিও সেই আশঙ্কা এখনও পর্যন্ত তদন্তসাপেক্ষ।
এখনও পর্যন্ত যে ঘটনাক্রম সামনে এসেছে, তাতে অনুমান করা হচ্ছে - পিসিশাশুড়ির কাছে ফ্ল্যাট কেনার টাকা চেয়েছিলেন ফাল্গুনী। কিন্তু, সুমিতা সম্ভবত সেই দাবি মানেননি। সেই কারণেই প্রথমে তাঁকে প্রবল মারধর করা হয়। এবং মারধর করে সুমিতার কাছ থেকে তাঁর এটটিএম কার্ডের পিন আদায় করেন ফাল্গুনী।
পরবর্তীতে সুমিতাকে খুন করা হয়। সেটা ঘটে সম্ভবত রবিবার কোনও একটা সময়। কিন্তু, ওই দিন আর সুমিতার দেহ ফেলার চেষ্টা করেননি ফাল্গুনী ও আরতি। তারই মধ্যে সুমিতার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন ফাল্গুনী। সেই টাকা অগ্রিমবাবদ জমা করে বউবাজারের একটি দোকানে গয়না তৈরির অর্ডার দেন ফাল্গুনী!
মনে করা হচ্ছে, সুমিতার অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা তুলে তা দিয়েই ফ্ল্যাট কেনার ছক কষেছিলেন ফাল্গুনী ও আরতি। সুমিতার এক বোনও পুলিশকে জানিয়েছেন, এই ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে আগেও নাকি ফাল্গুনীর সঙ্গে সুমিতার ঝামেলা হয়েছিল। পুলিশ এই সমস্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে খুনের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে।
এদিকে, এই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা উত্তর বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পরে তা মধ্যগ্রাম থানায় স্থানান্তরিত করা হয়। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বারাসত আদালত এই ঘটনায় ফাল্গুনী ও আরতির জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁদের ১৪ দিনের জন্য বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।