বন্ধু হয়ে বন্ধুকে খুন! ফের একবার এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ উঠল। এবারের ঘটনাস্থল কলকাতার গড়িয়াহাট। খবরে প্রকাশ, গত ২৬ মার্চ (২০২৫) বাড়ির সামনে থেকেই উদ্ধার হয় বিনোদ দাস নামে এক যুবকের মৃতদেহ। তিনি স্থানীয় পূর্ণদাস রোডের বাসিন্দা ছিলেন। সেই ঘটনার পর প্রায় দু'মাসের মাথায় খুনের অভিযোগের কিনারা করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হল নিহত যুবকেরই চার বন্ধুকে। কিন্তু, এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, গত ২৬ মার্চ যখন বিনোদের দেহ উদ্ধার হয়, সেই সময় তাঁর বাবা কলকাতায় ছিলেন না। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলেই বিনোদের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত ২৬ মার্চ বিনোদের বন্ধুরাই নাকি পুলিশের কাছে গিয়ে তাঁদের বন্ধুর মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, বিনোদের পরিবারের তরফে এই মৃত্যু নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ করা হয়নি। যদিও দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। এবং তারপর শেষকৃত্যও সম্পন্ন করা হয়!
সম্প্রতি বিনোদের বাবা কলকাতা ফেরেন। তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, যেদিন বিনোদের দেহ উদ্ধার হয়, সেদিনই ভোরবেলা বিনোদকে কম্বল জড়ানো অবস্থায় চার যুবকের সঙ্গে দেখা যায়। এতে বিনোদের বাবার সন্দেহ হয়। তিনি প্রথমে বিনোদের বন্ধুদের এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু, বিনোদের বন্ধুরা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরপর পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে এই ঘটনায় আরও একবার তদন্তের আবেদন জানান বিনোদের বাবা। তিনি এই আবেদন করেন গত ১৫ মে (২০২৫)।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, বিনোদের বাবার এই সন্দেহপ্রকাশ ও আবেদনের পরই পুলিশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। এবং তারপরই তারা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে! ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, নিহত বিনোদের পাঁজরের চারটি হাড় ভাঙা ছিল। তাঁর মাথার পিছনে আঘাত ছিল। এরপর বিনোদের দুই বন্ধু বাবলা ও বাবুকে গ্রেফতার করে জেরা করে পুলিশ। দাবি করা হচ্ছে, টানা জেরায় তাঁরা ভেঙে পড়েন এবং বিনোদকে খুনের কথা স্বীকার করেন। তাঁদের বয়ানের ভিত্তিতেই বিনোদের আরও দুই বন্ধু অরবিন্দ কুমার সাউ, যোগেন্দ্র চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, বাবলা ওরফে নীলাঞ্জনের কাছ থেকে ১৪ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন বিনোদ। সেই ধারের ৯ হাজার টাকা শোধ করছিলেন না তিনি। এ নিয়ে বচসার জেরেই গত ২৬ মার্চ বিনোদকে পিটিয়ে খুন করেন তাঁরই চার বন্ধু!
কিন্তু, প্রশ্ন হল - ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যেখানে স্পষ্টভাবে পাঁজরের হাড় ভাঙা ও মাথার পিছনের আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, সেখানে খুনের তদন্ত শুরু করার জন্য কেন পুলিশকে নিহত যুবকের বাবার দ্বিতীয়বার তদন্তের আবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হল? পরিবারের সদস্যরা মৃত্যু নিয়ে সংশয় প্রকাশ নাও করতে পারেন। তাঁরা সাধারণ মানুষ, কিন্তু পুলিশের চোখে কেন অসঙ্গতি ধরা পড়ল না?
বিনোদের বাবা পুনরায় তদন্তের আবেদন জানানোর মাত্র দু'দিনের মধ্য়েই পুলিশ ঘটনার কিনারা করে ফেলল। কিন্তু, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখলে তো পুলিশ অনেক আগেই এই ঘটনার কিনারা করে ফেলত!