রাজ্য–রাজনীতি থেকে সংসদীয় রাজনীতির ময়দানে ফিরতে চায় সিপিএম। অর্থাৎ শূন্যের গেরো কাটিয়ে ফিরতে চায়। আর এই কাজটির জন্য বিজেপি–তৃণমূল কংগ্রেসের মতো পথেই হাঁটতে চাইছে সিপিএম। সিপিএম নিয়ে একটি বৃহৎ রিপোর্ট তৈরি করেছে এক পেশাদার সংস্থা। সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে সেই রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে মঞ্চে। এখন একদিকে আইটি সেলের উপর জোর দিতে চাইছে সিপিএম এবং অপরদিকে পেশাদার সংস্থার পরামর্শ। তবে যে সিপিএম গ্রাম থেকে শহর জনসংযোগ করে মানুষের উপর নির্ভর করত সেই জায়গাটি থেকে সরে এল। তাই তো রাজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মধ্যে দিয়ে দেখানো হল সিপিএমের দুর্বলতা কোথায়।
এদিকে সারা বাংলার বুথ স্তরে যে সিপিএম ছিল কাণ্ডারি তাদের এখন অবস্থা সঙ্গীন। এই বুথ স্তরে সংগঠন কার্যত নেই বললেই চলে। এবার সিপিএম সেই বুথস্তরের সংগঠন নতুন করে গোছাতে চাইছে। এই কাজটিতেই সাহায্য করছে পেশাদারি সংস্থা। তাই তো বুথস্তরে কমিটি গড়ে তোলার সময়সীমাও বেঁধে দিল সিপিএম রাজ্য সম্মেলন থেকে। যদিও এই পেশাদার সংস্থা টাকার বিনিময়ে কাজ করছে না বলে দাবি করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তৃণমূল কংগ্রেস আইপ্যাকের সাহায্য নেয়। বিজেপি পেশাদার সংস্থার সাহায্য নেয় এবং নিজেদের আইটি সেলও আছে। আর সিপিএম সেই পথেই হাঁটল। এবার কি শূন্যের গেরো কাটবে? উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: পাড়ার সারমেয়রা বাড়ির কাছে এসে ডাকল, সাড়া পেল না মাম দিদির, খাবার দেবে কে?
অন্যদিকে রাজ্য সম্মেলনে মহম্মদ সেলিমের ঘনিষ্ঠ পেশাদার সংস্থা রিপোর্ট পেশ করে। ওই রিপোর্টে দেখানো হয়, অঞ্চল প্রতি কেন বামেরা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে সেটা তুলে ধরা হয়। কোথায় প্রকৃত দুর্বলতা সেটাও সবার সামনে নিয়ে আসা হয়। সিপিএম সূত্রে খবর, প্রত্যেকটি বুথের গত ১৫ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করা হবে। ১৫ বছর আগে এবং পরে কোন বুথে কত ভোট ছিল, কেন কমেছে, এখন কি পরিস্থিতি, কাদের ভোট কতটা বেড়েছে সবই বিশ্লেষণ করবে সিপিএম। পেশাদার সংস্থার রিপোর্টের পরই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই তথ্য হাতে উঠে আসার পরই নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে তা আন্দোলনের হাতিয়ার করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভোট প্রচারে বদল থেকে শুরু করে রণকৌশল পরিবর্তনের কথাও আলোচনা হয়েছে। আজ শেষ হবে সিপিএমের ২৭ তম রাজ্য সম্মেলন। ক’মাস আগেই মহম্মদ সেলিম সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন, ডেটা অ্যানালিস্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং–সহ নানা বিষয়ে লোক নিতে চান তাঁরা। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া যে সম্পন্ন হয়ে সেই দল কাজও করতে শুরু করেছে তার প্রমাণ মিলল এই রাজ্য সম্মেলনে। একদা যে সিপিএম কম্পিউটার বাংলায় ঢোকাতে বিরোধিতা করেছিল আজ তারাই নির্ভর করছে প্রযুক্তি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর। তাই তো রসিকতা করে কয়েকজন বলছেন, ‘এটাকেই বলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।’