তিন বছর আগে কলকাতা হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল। কিন্তু সেই রায় এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এবার সেই দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বিষয়টি নিয়ে ফের খবরে এল ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ মামলা। বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে ৩০ জুনের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। মামলার শুনানি শুরু হতে পারে এই মঙ্গলবার থেকেই।
আরও পড়ুন: বালুরঘাট-হিলি রেল প্রকল্পের অগ্রগতি কতদূর? বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করল হাইকোর্ট
১৯৮০’র দশকে গড়ে ওঠা ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’ নামের এই সংস্থাটি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন, পরিবার পরিকল্পনা, টিউবওয়েল স্থাপন ও জলসেচের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বলে দাবি। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘২০ দফা কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে রাজ্য সরকারের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল এই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। সংস্থার দাবি, সরকারি আধিকারিকদের একাধিক চিঠিতে তাদের কাজের প্রশংসা করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও ইতিবাচক বার্তা এসেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে যায় সরকারি অবস্থান। ২০১৫ সালে সরকার জানিয়ে দেয়, এই সংস্থাকে কখনও সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই কর্মীদের সরকারিভাবে নিয়োগ করা বা সংস্থাকে অধিগ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না।
এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। ২০২২ সালের ১ আগস্ট হাই কোর্ট রায় দেয়, যেখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। প্রথমত, সরকার বারবার প্রশংসা করেছে, স্বীকৃতি না দিলেও তার দায় অস্বীকার করা অনুচিত। দ্বিতীয়ত, সরকারের আচরণ হওয়া উচিত বিশ্বাসযোগ্য ও ধারাবাহিক। ৪০ বছর আগে নেওয়া অবস্থান আজ পুরোপুরি অস্বীকার করা অনৈতিক। তৃতীয়ত, সরকার প্রতিশ্রুতি না রাখলে সেটা দায়িত্বহীনতার মধ্যে পড়ে।
হাই কোর্ট রায়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, সংস্থাটির দাবিগুলি খতিয়ে দেখতে মুখ্যসচিব বা অন্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। যদি দাবিগুলি যথাযথ প্রমাণিত হয়, তবে সংস্থাকে অনুদান দেওয়া এবং কর্মীদের কিংবা তাঁদের উত্তরসূরিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।কিন্তু রায় ঘোষণার তিন বছর পরও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় ফের আইনি পথে হাঁটেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযোগ, রাজ্যের উদাসীনতা প্রমাণ করে যে সরকার রায় কার্যকর করতে ইচ্ছুক নয়। তাই এবার আদালত অবমাননার মামলা করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ‘কৃষি বিকাশ শিল্প কেন্দ্র’-এর কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক এখনও বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই দরিদ্র পটভূমি থেকে উঠে আসা এবং বছরের পর বছর কাজ করেও কোনও স্থায়ী কর্মসংস্থান বা অর্থনৈতিক সুরক্ষা পাননি। তাই এই মামলার নিষ্পত্তি তাঁদের কাছে এক ধরনের ন্যায়বিচারের লড়াই।