বীরভূমের সাঁইথিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রভাবশালী নেতার খুনের ঘটনার তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য উঠে আসছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার না করলেও, পুলিশ তিনজনকে আটক করে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা, এই খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, বরং ত্রিকোণ প্রেম জড়িত।
আরও পড়ুন: প্রেমঘটিত কারণ, জমি বিবাদের জেরেই খুন মালদার তৃণমূল নেতা, গ্রেফতার ৪ জন
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে। শ্রীনিধিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পীযূষ ঘোষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাত্র ৫০০ মিটার এগোতেই কোমরপুর মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন। আততায়ীরা কাছ থেকে গুলি চালায়, যাতে মাথার পেছন ভেদ করে গুলি কপাল ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর সোমবার পুলিশ ওই গ্রামের এক বিধবা তরুণী, আরেক রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় মহিলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক যুবককে আটক করে। জানা গিয়েছে, নিহত পীযূষ ঘোষ ঘটনার আগে বিধবা তরুণীর বাড়িতেই ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়েই হামলার মুখে পড়েন তিনি। পুলিশের সূত্রে জানা যাচ্ছে, পীযূষবাবু এবং আটক যুবক একসময় একসঙ্গে বালি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। তবে সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। শুধু ব্যবসায়িক বিরোধ, না কি প্রেমঘটিত কারণ তা এখনও নিশ্চিত নয়। শোনা যাচ্ছে, কয়েকদিন আগে দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল।
দুই মহিলার সঙ্গেই পীযূষের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী দল। এদের মধ্যে একজন তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের স্থানীয় নেত্রী। তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন বাইরে থাকেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, ওই নেত্রীর সঙ্গে আটক যুবকেরও সম্প্রতি সখ্যতা গড়ে ওঠে। সব মিলিয়ে ঘটনাটি ক্রমেই এক জটিল সম্পর্কচক্রের দিকে মোড় নিচ্ছে। নিহতের স্ত্রী ও পরিবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দিকেই আঙুল তুললেও, পুলিশ সে সম্ভাবনাকে এখনও প্রাধান্য দিচ্ছে না। বরং প্রেম, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জট মেলাতে এখন বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই দুই মহিলার সঙ্গে শুধু পীযূষ ঘোষ নয়, আরও অনেকেরই নাকি ঘনিষ্ঠতা ছিল। । তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও ঘটনাটি নিয়ে ধন্দে। ব্লক কমিটির এক সদস্য বলেন, এত বড় একজন নেতাকে কেন খুন করা হল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সবদিক খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশও কোনও তত্ত্ব একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে আপাতত, ত্রিকোণ প্রেমের দিকটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।