বর্ষায় এখন রয়েছে ডেঙ্গির দাপট। তারইমধ্যে এবার জাপানি এনকেফালাইটিস আতঙ্কে কাঁপছে জলপাইগুড়ি জেলা। জেলার পাহাড়পুর গ্রামের এক প্রৌঢ়ার মৃত্যুর পর এর সংক্রমণের আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। মৃতা ঊষা রায় (৫৩) জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যু এনকেফালাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণে হয়েছে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত এখনও না হলেও চিকিৎসকরা এনকেফালোপ্যাথির উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: মশা নিধনে বড় পদক্ষেপ, উন্নত প্রজাতির গাপ্পি মাছ উৎপাদনে জোর মৎস্য দফতরের
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ঊষা রায়ের মৃত্যুর কারণ সরাসরি এনকেফালাইটিস সংক্রমণ কি না, তা নির্ধারণে বিস্তারিত মেডিক্যাল রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাঁর শরীরে স্নায়বিক জটিলতা তথা এনকেফালোপ্যাথির লক্ষণ স্পষ্ট ছিল, যা সাধারণত জেই ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।এদিকে, একই রকম উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রূপলাল হাজরা (৫৮)। তিনি গত ১১ জুলাই থেকে জ্বরে ভুগছিলেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্তমানে তিনি জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা তাঁকে এনকেফালাইটিস আক্রান্ত সন্দেহে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এনকেফালাইটিস ভাইরাস সাধারণত ‘কিউলেক্স বিসনুই’ প্রজাতির মশার মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ভাইরাসটির মূল বাহক শুয়োর। শুয়োরের শরীরে এই ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হয়। সংক্রামিত শুয়োরকে কামড়ানো মশা পরে মানুষকে কামড়ালে সংক্রমণ ঘটে। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর একসঙ্গে নড়েচড়ে বসেছে। পাহাড়পুর ও বাহাদুর পঞ্চায়েত এলাকায় শুরু হয়েছে সার্চ অপারেশন। পাহাড়পুরে যদিও কোনও শুয়োর খামারের অস্তিত্ব মেলেনি, তবে বাহাদুর গ্রামে দুটি শুয়োর খামার চিহ্নিত হয়েছে। প্রশাসনের তরফে দ্রুত সেই খামার থেকে শুয়োর সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
একই সঙ্গে আক্রান্তদের বাড়ি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলছে ধারাবাহিক ফগিং। জেলা প্রাণীসম্পদ দফির, সদর স্বাস্থ্য প্রশাসন এবং ব্লক স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. অসীম হালদার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে আক্রান্ত অঞ্চলে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। কিউলেক্স মশা চার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে, তাই সংক্রমণ প্রতিরোধে পুরসভাকেও সতর্ক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্ভাব্য হটস্পট এলাকাগুলিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং শুয়োর খামারের উপস্থিতি নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।