রঘুনাথপুর পুরসভার পর এবার বেলডাঙা পুরসভা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পুরসভার বোর্ড মিটিং বয়কট করলেন শাসক দলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলর। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান অনুরাধা হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ নিয়েও অনাস্থা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। এর ফলে বেলডাঙা পুরসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এল বলেই দাবি বিরোধীদের। যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় তৃণমূলের পুর-কোন্দল, রাজ্য়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে TMC কাউন্সিলররাই!
শুক্রবার বিকেলে 'বোর্ড অব কাউন্সিলর্স'-এর সাধারণ সভা ডেকেছিলেন চেয়ারম্যান। তবে কিছু কারণে বৈঠকের সময় এগিয়ে সকাল সাড়ে দশটায় করা হয়। সেই বৈঠকে সকল পুরপ্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হলেও তৃণমূলের মাত্র দুইজন কাউন্সিলর হাজির ছিলেন। বাকি সাতজনই ছিলেন অনুপস্থিত। উপস্থিত হননি বিরোধী কাউন্সিলররাও। ফলে বাতিল হয়ে যায় সেই বৈঠক।
এই পুরসভায় মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা ১৪ জন। এর মধ্যে তৃণমূলের ৯ জন, বাকি ৫ জন বিজেপি ও নির্দলের। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলেরই সাতজন সদস্য সভা এড়িয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে তৃণমূল।
বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কাউন্সিলরদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান পুর প্রতিনিধিদের সম্মান করেন না। তাঁদের মতে, চেয়ারম্যান কাউন্সিলরদের মানুষ বলেই মনে করেন না। পরামর্শ নেওয়া তো দূরের কথা তিনি এককভাবে সবকিছুতে সিদ্ধান্ত নেন। আরও অভিযোগ, পুরসভায় একনায়কতন্ত্র চালনো হচ্ছে। এমনকী দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সেই কারণেই তাঁরা সভা বয়কট করেছেন বলে দাবি।
এদিকে, দুই তৃণমূল কাউন্সিলর যাঁরা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁরা জানান, বৈঠকের সময় পরিবর্তন করা হয় হঠাৎ করে। ফলে ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে তাঁরা উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তাঁরাও স্বীকার করেন, চেয়ারম্যানের কাজকর্মে কাউন্সিলরদের মতামত গুরুত্ব পায় না। বিজেপি কাউন্সিলাররাও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিরোধীদের কোনও মর্যাদা নেই এই পুরসভায়। আর যেখানে তৃণমূল কাউন্সিলররাই সভায় যান না, সেখানে বিরোধীদের কী ভূমিকা থাকবে?
অন্যদিকে, সব অভিযোগ খারিজ করেছেন চেয়ারম্যান অনুরাধা হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি সভায় যেতে পারেননি। তাই বোর্ড মিটিং পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অহেতুক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তিনি জানান, কোনও অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় দেন না তিনি। ফলে এতে কিছু লোকের অসন্তোষ থাকতেই পারে। তিনি আরও জানান, পুরো বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। আগামী ১০ জুন পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ের দিন নির্ধারিত হয়েছে। তবে সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেও শাসকদলের বেশ কিছু কাউন্সিলর অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্তে অনড়। এই ঘটনায় বেলডাঙা পুরসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘাত প্রকাশ্যে চলে এল বলে মনে করছেন বিরোধীরা।