পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষের মাথা ইট দিয়ে থেঁৎলে খুন, তারপর দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে লোপাট করার ছক, এবং দেহ সেই ট্রলিতে ভরতে সমস্যা হওয়ায় অত্যন্ত নৃশংসভাবে বঁটি দিয়ে মৃতদেহের দু'টি পায়েরই পাতা কেটে ফেলা - কুমারটুলি কাণ্ডের এই 'মোডাস অপারেন্ডি' শুনে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, অপরাধ মনস্ক না হলে কি আদৌ এমন আচরণ করা সম্ভব?এই প্রশ্ন যে কতটা যুক্তিযুক্ত, তার স্বপক্ষে ইতিমধ্যেই সামনে আসতে শুরু করেছে নানা তথ্য। যে তথ্য বলছে, সুমিতা ঘোষের খুনে মূল অভিযুক্ত তাঁরই ভাইপোর স্ত্রী ফাল্গুনী ঘোষ মোটেও প্রথমবারের অপরাধী নন। এর আগেও পুলিশে খাতায় নাম উঠেছে তাঁর। তিনি আসলে একজন 'হিস্ট্রি শিটার'!সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং বেশ কিছু সোনার গয়না চুরি করার অভিযোগে ফাল্গুনীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যার জন্য তাঁকে কিছুদিন হাজতবাসও করতে হয়। পরে অবশ্য তিনি জামিন পেয়ে যান। এবং তারপর প্রথমে অসমে নিজের শ্বশুরবাড়ি, এবং পরে সেখান থেকে মধ্যমগ্রাম চলে আসেন।অপরাধের সঙ্গে ফাল্গুনীর সম্পর্ক পুরোনো:ফাল্গুনী আসলে অসমের জোরপাকড়ি এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিয়ে হয়েছিল এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে - দেখাশোনা করে। বিয়ের পর ২০২১ সালের ৩ জুলাই শিলিগুড়ির সুভাষ পল্লিতে বেড়াতে যান ফাল্গুনী ও তাঁর স্বামী। সুভাষ পল্লিতে থাকেন ফাল্গুনীর স্বামীর মামা ও মামী।ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, সেই সময় প্রায় একমাস মামা-মামীর বাড়িতে ছিল ওই দম্পতি। কিন্তু, ফাল্গুনী ও তাঁর স্বামী শিলিগুড়ি থেকে অসম ফিরে যাওয়ার পর ফাল্গুনীর মামীশাশুড়ি খেয়াল করেন, তাঁর বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ২৫ হাজার টাকা এবং বেশ কিছু সোনার গয়না খোয়া গিয়েছে।এ নিয়ে পরবর্তীতে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং তদন্ত শুরু হওয়ার পর পুলিশের জেরার মুখে অপরাধ কবুল করেন ফাল্গুনী। তাঁর কাছ থেকে চুরি যাওয়া গয়না ও টাকাও উদ্ধার করা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে কিছুদিন হাজতবাস করতে হলেও পরবর্তীতে জামিন পান ফাল্গুনী।অভিযোগ, এরপর অসমে শ্বশুবাড়িতে ফিরে গিয়ে সেখানেও অশান্তি শুরু করেন তিনি। তারপর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসেন মধ্যমগ্রামে। এবং এখানে এসে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধেই বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফাল্গুনী! সেই মামলা এখনও চলছে বারাসত আদালতে। এমনকী, এই মামলার জন্যই ফাল্গুনীর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের আদালত থেকে জামিন পর্যন্ত নিতে হয়।এবার সেই ফাল্গুনীর বিরুদ্ধেই তাঁর পিসিশাশুড়িকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এসব শোনার পরও শিলিগুড়ির চুরির ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ফাল্গুনীর ভুক্তভোগী মামাশ্বশুর। কিন্তু, ফাল্গুনীর ভাসুর জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম শাস্তি চান।