উচ্চমাধ্যমিক শুরুর দিনেই এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে হল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার অন্তর্গত লোকপুর-কারকবেড়ে গ্রামের বাসিন্দাদের। পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল! সূত্রের দাবি, ওড়নার ফাঁসে ঝুলছিল ওই কিশোরীর দেহ। কিন্তু, এই মৃত্যু নিয়ে দানা বেঁধেছে রহস্য। পরিবারের দাবি, ওই নাবালিকা আত্মঘাতী হয়েছে। কিন্তু, এই দাবি নিয়েই একাধিক প্রশ্ন, পালটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কেন এই ঘটনা নিয়ে বাড়ছে রহস্য?
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ওই ছাত্রী পড়াশোনায় ভালো ছিল। উচ্চমাধ্যমিকের ফল যাতে ভালো হয়, তার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করছিল সে। এমনকী, পরীক্ষা শুরুর দিনে - অর্থাৎ - সোমবার (৩ মার্চ, ২০২৫) সকালেও ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসে গিয়েছিল সে। তাহলে তার মাত্র কিছুক্ষণ পরই কীভাবে সেই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হল? আত্মহত্যার যে তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে, প্রশ্ন হল - সে কি সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসার পর স্থির করে যে আত্মহত্যা করবে? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও অজানা তথ্য?
পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না এলে, তদন্ত না এগোলে এখনই নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এদিকে, মৃতার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, মেধাবী ওই ছাত্রী দিনরাত পড়াশোনা করা সত্ত্বেও পরীক্ষা যত এগিয়ে আসছিল, ততই নাকি তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমছিল। পরীক্ষা নিয়ে বাড়ছিল ভয়। বিষয়টি নাকি তার মাকেও জানিয়েছিল ওই কিশোরী।
ছাত্রীর কাকা জানিয়েছেন, পরীক্ষার আগের দিন - অর্থাৎ - রবিবার ভাইঝি বলেছিল, তার শরীর খারাপ লাগছে। তার মনে হচ্ছিল, 'তাকে নাকি কে ডাকছে'! সেদিন ওই কিশোরীর মন ভীষণ আনচান করছিল বলেও নাকি সে জানিয়েছিল।
কিন্তু, এসবের পরও সোমবার সকালে নির্দিষ্ট সময়েই সে ঘুম থেকে ওঠে। তারপর হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসে। এমনকী, ঘুম থেকে ওঠার পর নিজের মামাকে ফোনও করেছিল সে। প্রশ্ন হল, এসবের পরও কেন আত্মঘাতী হতে যাবে ওই কিশোরী?
যদিও মনোবিদদের একাংশের ব্যাখ্যা, মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। কে, কখন, কী করবে, তা সত্যিই সবসময় আগে থেকে বোঝা যায় না। বিশেষ করে জীবনে যখন কোনও বড় পরীক্ষা আসে, অনেকেই সেই সময় নিজের অনুভূতি, আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এক নাবালক বা নাবালিকার কাছে বোর্ড পরীক্ষা তেমনই একটা বড় ঘটনা।
এমন একটা সময় সে মানসিকভাবে বিচলিত হতেই পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবক, শিক্ষকদের পাশে থাকা খুব দরকার। পরীক্ষার্থীদের বোঝানো দরকার, একটা মাত্র পরীক্ষা কখনই গোটা একটা জীবনের মাপকাঠি হতে পারে না। এখন বাঁকুড়ার এই কিশোরীর মধ্যেও তেমন কোনও মানসিক উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল কিনা, পুলিশের তদন্তেই তা উঠে আসবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।