উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে বোরলি মাছের কদর বরাবরই চরমে। ডুয়ার্সের হোটেল-রিসর্ট থেকে কলকাতার খাদ্যরসিক তিস্তার রূপালি বোরলি যেন এক স্বাদময় নস্টালজিয়া। কিন্তু গত কয়েকবছরে এই মাছের প্রজনন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল নির্বিচারে বাচ্চা মাছ ধরার কারণে। এবার তিস্তার ‘ইলিশ’ হিসেবে পরিচিত বোরলি সংরক্ষণে কড়া পদক্ষেপ নিল জলপাইগুড়ি জেলা মৎস্য দফতর। (আরও পড়ুন: ডিএ মামলায় SC-র তীব্র ভর্ৎসনা, রাজ্যকে 'মহাজন' আখ্যা, 'নৈতিক জয়' সরকারি কর্মীদের)
আরও পড়ুন: মরশুমের শুরুতেই দিঘায় মৎজীবীদের জালে ১৫ টন ইলিশ, আসছে আরও ২৫০ টন
বোরলি মাছের প্রজনন মরসুমে সূক্ষ্ম জাল ও চাইনিজ জালের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দফতর। তিস্তা, জলঢাকা ও করলা নদীতে এই নিষেধাজনা বলবৎ থাকবে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত। মৎস্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, কেউ এই নির্দেশিকা লঙ্ঘন করলে তাকে জেল ও জরিমানা দুইই হতে পারে। দফতরের সহকারী অধিকর্তা রমেশচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বর্ষার জলে এখন বোরলি ডিম পাড়ছে। সেই ডিম থেকেই জন্ম নিচ্ছে ছোট ছোট মাছ। অথচ সূক্ষ্ম জালের মাধ্যমে সেই বাচ্চা মাছই ধরা হচ্ছে। শুধু বোরলি নয়, একই বিপদে পড়ছে অন্যান্য নদীয়ালি মাছও। তিনি আরও জানান, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নদী সংলগ্ন এলাকায় লিফলেট বিলি ও প্রচার শুরু হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে জানানো হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব। (আরও পড়ুন: '৭ মাস তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি CBI', সুপ্রিম কোর্টে বলল আরজি কর নির্যাতিতার পরিবার)
আরও পড়ুন: আছে এপিক কার্ড, তবে সন্ধান নেই ভোটারের! আজব কাণ্ড বাংলার এই বিধানসভা কেন্দ্রে
প্রতিবছর বর্ষায় তিস্তা নদী ফুলে ফেঁপে উঠলেই দেখা মেলে ডিমভর্তি বোরলির। নদীপাড়ের মৎস্যজীবীরা পরিবারগুলির কাছে এটি উপার্জনের মরসুম। সেই সুযোগে অনেকেই নিয়ম ভেঙে ফেলছেন সূক্ষ্ম জাল। কারণ বাজারে তিস্তার তাজা বোরলির চাহিদা এখন তুঙ্গে। পর্যটকদের পাতে এই মাছ পরিবেশন করতে হোটেল, রিসর্টগুলিও কিনছে চড়া দামে। চচ্চড়ি হোক বা সর্ষে ঝোল বোরলির স্বাদে মজে যাচ্ছেন পর্যটকরা। বোরলির টানে অনেকেই উত্তরে ছুটে যান, কারও কাছে এই মাছ নস্টালজিয়া, কারও কাছে স্মৃতির রসায়ন। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ বললেই মনে পড়ে যায় বোরলির কথা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও ছিলেন বোরলি-প্রেমিক। অথচ চাহিদা থাকলেও জোগান এতটাই কম যে বহু পর্যটক ফিরে যান হতাশ হয়ে। এই প্রেক্ষিতেই এবার মাছ বাঁচাতে কড়া মনোভাব নিয়েছে মৎস্য দফতর। নিয়মিত নজরদারির পাশাপাশি প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।