আজ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের ফলাফল। তাতে নবম স্থান অধিকার করেছে তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুলের ছাত্র দেবাঙ্কন দাস। তবে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া বাকি পড়ুয়াদের থেকে তার লড়াইটা ছিল আলাদা। দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছিল দেবাঙ্কন। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে মাধ্যমিকে নবম স্থান দখল করল পিতৃহারা দেবাঙ্কন। তার সাফল্যে খুশি তুফানগঞ্জের মানুষজন। ফল প্রকাশ হতেই তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে ভিড় করেন এলাকার মানুষজন। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়। তিনি দেবাঙ্কনের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
আরও পড়ুন: 'মাধ্যমিকে প্রথম অদৃত' শুনেই কেঁদে ফেলল রায়গঞ্জের ছেলে! ফাঁস সাফল্যের রহস্য
কোচবিহারে তুফানগঞ্জ শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবাঙ্কন দাস। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দেবাঙ্কনের বাবা নিবারণ দাস পেশায় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তবে বছর খানেক আগে দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তখন থেকেই মা কষ্ট করেই ছেলেকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি একমাত্র ছেলের পড়াশোনার দায়িত্ব এসে পৌঁছায় তাঁর মা জয়ন্তী দাসের কাঁধে। ছেলে যাতে ভালোভালো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল ছেলে কিছু করে দেখাবে। তাঁর কথায়, ছেলে রাত জেগে পড়াশোনা করত। তখন ছেলের সঙ্গে তিনিও রাত জাগতেন। এখন ছেলে যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় হতে পারে, ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনায় করেছেন জয়ন্তী দাস।
মাধ্যমিকে ৭০০ নম্বরের মধ্যে দেবাঙ্কন দাসের প্রাপ্ত নম্বর হল ৬৮৭। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় দেবাঙ্কন। তবে পরীক্ষায় এত বড় সাফল্য সত্ত্বেও বাঁধাধরা নিয়ম মেনে পড়াশোনা করেনি দেবাঙ্কন। যখন ভালো লাগত তখনই পড়তে বসত বলে সে। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলায় আগ্রহ রয়েছে দেবাঙ্কনের। সে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসে।
দেবাঙ্কনের কথায়, ভালো ফল হবে সেটা আশা ছিল। তবে নবম হবে সেটা ভাবতে পারেনি। তার সাফল্যের পরেই প্রচুর শুভেচ্ছা জানাতে তার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার মানুষেরা। ছেলের সাফল্য উচ্ছ্বসিত জয়ন্তী দাস। তিনি বলেন, ‘আমি উচ্চশিক্ষিত নই। ছেলে রাত আড়াইটে তিনটে পর্যন্ত পড়াশোনা করত। আমিও রাত জেগে বসে থাকতাম। আটজন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত।’