শিখ ধর্মাবলম্বী এক পুলিশ অফিসারের পাগড়িতে হাওয়াই চটির কাট-আউট ছোড়ার অভিযোগে উঠেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনায় ইতিমধ্যেই সুকান্তের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর। এবার নাম না করে বিধানসভা সুকান্তকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: একইসঙ্গে দুই জেলার ভোটার, এপিক নম্বরও ভিন্ন! সুকান্তর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত…
সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নাম না করেই বলেন, একজন ‘হাফ মিনিস্টার’ তাঁর পাড়ার মোড়ে গিয়ে এক পঞ্জাবি অফিসারের পাগড়িতে হাওয়াই চটির কাট-আউট ছুড়েছেন। মমতা আরও বলেন, ‘হাওয়াই চটি এতই পছন্দ হলে দোকান খুলে ফেলুন।’ মমতার কটাক্ষ, আমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় এতজন মানুষের প্রাণ গিয়েছে। গোটা দেশ শোকের আবহে। আর এই সময় কেউ কেউ এমন অপমানজনক কাজ করছেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। মহেশতলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে সুকান্ত মজুমদারকে রাস্তাতেই আটকে দেয় পুলিশ। পরে মমতাকে তুলসি গাছ দিতে কালীঘাটে যেতে চান সুকান্ত। তাঁকে গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছিল। সেই সময় একটি হাওয়াই চটির কাট-আউট ছুড়ে দেন তিনি, যা গিয়ে লাগে পাগড়ি পরা এক পুলিশ অফিসারের মাথায়।
অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ ও ধর্মীয় সংগঠন। ইতিমধ্যে রাজ্যের একাধিক গুরুদ্বার কমিটি সুকান্তর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে। যদিও সুকান্ত দাবি করেছেন, কাট-আউট ছোড়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাকির সময় পুলিশ তাঁকে ঠেলে দেওয়ায় কাট-আউটটা ওই অফিসারের পাগড়িতে লাগে। এই ঘটনার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শিখ সম্প্রদায়ের তরফে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, পাগড়ি শিখ সম্প্রদায়ের মর্যাদার প্রতীক। সেখানে চটির কাট-আউট লাগা নিছক দুর্ঘটনা নয়, একধরনের অবমাননা।
এদিকে বিজেপি শিবির মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে রাজনৈতিক সুবিধা তোলার চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, মানুষ এখন চটি বা স্নিকার্স নিয়ে ভাবছে না। মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, ঘটনার ধর্মীয় দিকটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ ২০২৪ সালে শুভেন্দু অধিকারী এক শিখ পুলিশ অফিসারকে ‘খলিস্তানি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন বলে যে বিতর্ক হয়েছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও শিখ সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হল রাজ্যে।