বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনার তদন্ত করছে সিআইডি। এবার এই ঘটনায় তদন্তের জন্য প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহাকে তলব করল সিআইডি। বুধবার সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে সিআইডির বর্ধমান অফিসে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
আরও পড়ুন: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি টাকা নয়ছয়, তদন্তে ইডি, ব্যাঙ্কের অফিসারদের তলব
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলার ভিত্তিতেই এই তলব। তদন্তকারীরা মনে করছেন, টাকার গরমিল সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁর কাছেই থাকতে পারে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে নিমাইচন্দ্রবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু জানিয়ে দেন, এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চান না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার খবর প্রথম উঠে আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। জানা যায়, বড়বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিক্সড ডিপোজিট থেকে টাকা তোলার আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, ওই অর্থ সরাসরি একটি ঠিকাদার সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তখনই কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেন, এর আগেই প্রায় পুরো টাকাই তোলা হয়ে গিয়েছে! ব্যাঙ্কের খতিয়ে দেখা নথি থেকে জানা যায়, মোট ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা ইতিমধ্যেই অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে নেমে সিআইডি বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাক্তন উপাচার্যের নামও উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ততদিনে উপাচার্য বদল হয়ে যান। অস্থায়ী উপাচার্যের আমলে তদন্ত হলেও রিপোর্ট সামনে আসেনি। অনেকদিন পর, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে সেই রিপোর্ট পেশ করা হয়। তাতে এক প্রভাবশালী আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, ততদিনে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ছাত্রছাত্রীদের একাংশ দাবি করেন, ঘটনায় যাঁরা যুক্ত, তাঁদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনের তরফে জানানো হয়, তাঁরা সেই সময়ই প্রাক্তন উপাচার্যের কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। এমনকি, শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও তুলেছিলেন। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। এখন যা হচ্ছে, তা হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, সিআইডি অনেককেই জেরা করেছে। কাউকে তলব মানেই তিনি অপরাধী, এমন নয়। তদন্তের স্বার্থে তথ্য চাওয়া হচ্ছে।