আজ, সাধারণতন্ত্র দিবসের দিনই সকালে দাঁতন ভাঙতে জঙ্গলে যান এক কৃষক। কিন্তু কে জানত সেখানে বিপদ লুকিয়ে আছে। তবে দাঁতন ভাঙতে গাছের গোড়ায় যেতেই দক্ষিণরায়ের মুখোমুখি হয়ে পড়লেন ওই কৃষক। ওই মুহূর্তে পালাতে গেলে বাঁচা যাবে না। সেটা বুঝতে পেরে একটু একটু করে পা পিছনের দিকে সরাচ্ছেন। অবশেষে বাঘের গর্জনে স্নায়ু শক্ত করে ফেললেন। ভেবে নিয়েছিলেন, প্রাণ এমনিতেও যাবে, ওমনিতেও যাবে। অনন্ত লড়াই করার চেষ্টা করা যাক। চোখে চোখ রেখে তখন শুরু হল তুমুল লড়াই। সেই লড়াই কঠিন বুঝতে পেরে পিছু হটল দক্ষিণরায়। আর প্রাণ বাঁচলেন কৃষক। ঘরে ফিরে শোনালেন হাড়হিম অভিজ্ঞতার কথা। বাঁকুড়ার সর্বেশ্বর মাণ্ডি এখন গ্রামে হিরো।
প্রথম যখন মুখোমুখি হলেন ওই কৃষক দক্ষিণরায়ের তখন একটা গানের লাইনও তাঁর মনে এসেছিল, তুমি যে এখানে কে তা জানত! ইদানিং প্রায়ই ভিন রাজ্যের বাঘ বাংলায় ঢুকে পড়ছে। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া থেকে সেই খবরই মিলেছে। আর রবিবার বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল বাঁকুড়ায়। কৃষক সর্বেশ্বর মাণ্ডি বলেন, ‘আমি পুকুরকাটা জঙ্গলে দাঁতন ভাঙছিলাম। হঠাৎ চোখের সামনে বাঘ দেখে চমকে উঠি। আমাকে দেখে প্রবল গর্জন করছিল। আমি তখন গায়ে থাকা চাদর মাথার উপরে জোরে ঘোরাতে শুরু করি। আর হুলা পার্টির মতো চিৎকার করি। কিন্তু মনে ভয়ও পাচ্ছিলাম। সেটা ওকে বুঝতে দিইনি। কিছুক্ষণ পর বাঘ পিছনে চলে যেতেই দৌড়ে প্রাণ বাঁচাই।’
আরও পড়ুন: আরএসএস প্রধানের টানা ১০ দিনের সফরে কাটছাঁট, কবে আসছেন? কতদিন থাকবেন ভাগবত?
বাড়ি ফিরে এই খবর দিতেই গোটা গ্রামে তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতারাতি ওই কৃষক গ্রামে হিরো হয়ে যান। ওই কৃষকের দক্ষিণরায়ের সাক্ষাতের কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে না বন দফতর। তাই এখন বাঘের অবস্থান খোঁজ করা হচ্ছে। টাইগার কনজারভেশন অথরিটির বিধি মেনে কাজ শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) প্রদীপ বাউরি বলেন, ‘বাঘটি শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে সারেঙ্গা থেকে রাইপুর হয়ে রানিবাঁধের বারোমাইল জঙ্গলের পথে চলে যায়। সেখান থেকে সুতান, ঝিলিমিলি হয়ে বান্দোয়ান চলে গিয়েছে।’
বাঁকুড়ায় কৃষকের এমন অভিজ্ঞতা শুনে অনেকেই হতবাক। কারণ বাঘটি সামনে ছিল বলে কৃষক এমন লড়াই করতে পেরেছেন। যদি পিছন থেকে বাঘটি আক্রমণ করত তাহলে নিজেকে বাঁচানো কার্যত কঠিন ছিল। তবে বাঘটি এই জঙ্গলে এল কেমন করে তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বন দফতরের পক্ষ থেকে চারদিকে খোঁজখবর করা হচ্ছে। জঙ্গলে থাকা ট্র্যাপ ক্যামেরায় কোনও ছবি ধরা পড়েছে কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। যেহেতু বাঘটি নিজেই পিছু হটেছে তাই কৃষকের গায়ে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে ওখানে বাঘের পায়ের ছাপ বন দফতর পেয়েছে বলে সূত্রের খবর।