ভারত-বাংলদেশ সীমান্তে উত্তেজনা থামার নাম নেই। বিগত মাসগুলিতে বিভিন্ন জায়গায় কাঁটাতারে বাধা সহ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সীমান্তে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফের সেই একই ধরনের উত্তেজনাপূর্বক ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। রিপোর্ট অনুযায়ী, দিনহাটায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গীতালদহের নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছিল বাংলাদেশি পাচারকারীরা। তবে তাদের অনুপ্রবেশে বাধা দেয় বিএসএফ। এদিকে এই ঘটনায় ৪ বাংলাদেশি নাগরিক জখম হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রথম আলোর রিপোর্টে। আহতদের নাম - শামসুল আলম (৬০), জাবেদ আলি (৫৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও কাসেম আলি (৫০)। অপরদিকে টিভি৯ বাংলার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিএসএফ জওয়ান জখম হয়েছেন। (আরও পড়ুন: ডিএ বৃদ্ধির পরে সরকারি কর্মীরা পেতে পারেন আরও এক বড় খবর, দাবি খোদ ব্যয় সচিবের)
আরও পড়ুন: সুরাপ্রেমীদের জন্যে সুখবর, এই হুইস্কির ওপরে এক ধাক্কায় ৫০% শুল্ক কমাল সরকার
আরও পড়ুন: মোদীর ওপর বাংলাদেশকে ছাড়লেন ট্রাম্প, ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা দিলেন 'ব্যাখ্যা'
এই 'সংঘর্ষ' নিয়ে বিএসএফের তরফ থেকে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। অপরদিকে প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি আধিকারিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাকিল আলম বলেছেন, সীমান্তের কাছে বাংলাদেশিরা জড়ো হয়েছিলেন বলে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। ঘটনার বিশদ জানতে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এদিকে উত্তেজনা ছড়াতেই সীমান্তে বিএসএফের বেশ কয়েকটি গাড়ি পৌঁছে যায় বলে দাবি করা হয় টিভি৯ বাংলার রিপোর্টে। (আরও পড়ুন: মোদীর ওপর বাংলাদেশ ইস্যু ছেড়ে দিলেন ট্রাম্প, কী বলছে ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যম?)
আরও পড়ুন: দিল্লির সরকার গঠন নিয়ে 'সাসপেন্স' শেষ করলেন বিজেপি নেতা, জানিয়ে দিলেন...
এর আগে সম্প্রতি মালদার সুকদেবপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ছড়িয়েছিল। গত ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশিরা চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। সুকদেবপুরবাসীদের অভিযোগ, ইউনুস জমানাতেই বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে লুটপাট চালাতে শুরু করেছে। তেহট্ট এলাকাতেও কৃষিজমিতে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে উত্তর দিনাজপুরে অনপ্রেশের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এদিকে উত্তরে জলপাইগুড়িতেও সীমান্তে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। সীমান্ত নিয়ে নদিয়াতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। (আরও পড়ুন: মোদী আমেরিকা ছাড়তেই নয়া শুল্ক চাপানোর পথে আমেরিকা, বড় ঘোষণা ট্রাম্পের)
এদিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোদালিয়া নদীর অংশে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নাকি বিজিবি নিজেদের 'দখল প্রতিষ্ঠা' করেছিল সম্প্রতি। এই ৫ কিলোমিটার জমি নিয়ে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে দেখা দেয় মতপার্থক্য। উল্লেখ্য, এই কোদালিয়া নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় দিয়ে। এরপর কিছু দূর বয়ে তা মহেশপুরের মাটিলা সীমান্ত দিয়ে আবার ভারতের রানাঘাটে প্রবেশ করে। এখানেই প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে 'মতপার্থক্য'। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তান আমলে ১৯৬১ সালের মানচিত্রের বরাত দিয়ে বিজিবি দাবি করে, ওই ৫ কিলোমিটার এলাকা তাদের। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত। (আরও পড়ুন: 'ভারতের মতো গণতন্ত্রে CJI কীভাবে...', বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ধনখড়ের)
আরও পড়ুন: গাড়ি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১০ কুম্ভযাত্রী, আহত আরও অন্তত ১৯ জন
উল্লেখ্য, বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানাচ্ছে বিজিবি। এদিকে অনুপ্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করলে তাতেও আপত্তি ওপারের শাসক গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে সংঘাত দেখা গিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। এই আবহে মালদা সহ একধিক জায়গায় ভারতীয় ভূখণ্ডের কাঁটাতার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বিএসএফ। এর জেরে সীমান্তের বহু জায়গায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭৫ সালে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুকি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা অনুযায়ী, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে 'প্রতিরক্ষা কাঠামো' তৈরি করা যাবে। এদিকে ২০১০ সালে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতকে লিখিত আকারে অনুমতি দিয়েছিল যে সীমান্তে ১৫০ গজের ভিতরেও প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে ভারত। এই কথা নিজে স্বীকার করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। এখন বাংলাদেশের গদিতে 'মুখ' পরিবর্তনের পরে তাদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, আগের সরকারের স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে বাধ্য তারা।