প্যারালিম্পিক্সে নজির গড়েছেন ভারতের দিপ্তী জীবনজি। অন্ধ্রপ্রদেশের এই মেয়ে জিতে নিয়েছেন ৪০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক। মঙ্গলবার মহিলাদের ৪০০ মিটার টি২০ ইভেন্টের ফাইনাল ছিল । সেখানেই ভারতকে এবারের ১৬তম প্যারালিম্পিক্স পদকটি এনে দেন তিনি। দিনের শেষে ভারতের পদক জয়ের সংখ্যা ছাপিয়ে যায় টোকিয়ো অলিম্পিক্সকেও। দেশের ঝুলিতে প্যারিসে প্যারালিম্পিক্স থেকে এখনও পর্যন্ত এসেছে ২০টি পদক।
মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে মানুষ কত কি না করতে পারে, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্যারালিম্পিক্স। যেখানে ভারতে এখনও রাস্তার ধারে অনেক সুস্থ সবল মানুষকে দেখা যায় হাত পেতে অর্থ চাইতে, সেখানেই দেশকে বিশ্বের মাটিতে গৌরবান্বিত করে বারে বারে দেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন শারীরিক সমস্যা সম্পন্ন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা। কবে যে সমাজে তাঁদের লড়াইয়ের কাহিনি সত্যিকারের প্রতিফলন ফেলবে সেটাই দেখার। তবে যারা সত্যি মন থেকে চান কিছু করে দেখাতে, তাঁদের কাছে উদাহারণ হিসেবে থাকবেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা।
অবশ্য সমাজের কথা বলতে গেলে, লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যেতে পারে সকলের। কোন সমাজে জীবনজি বেড়ে উঠেছেন শুনলে চমকে উঠতে পারেন আপনারা। গায়ের রং কালো, আর মুখের গঠন সাধারণ মানুষের মতো না হওয়ায় জন্মের পরই জীবনজির গায়ে গ্রামের লোকেরা সেঁটে দিয়েছিলেন পাগল আর বাঁদরের তকমা। আর সেই তিনিই ওয়ারাঙ্গাল জেলার নাম গোটা দেশে এবং বিশ্বের মানচিত্রে মেলে ধরলেন।
মাত্র ৫৫.৮২ সেকন্ড সময় নিয়ে ৪০০ মিটার দৌড় শেষ করেন দিপ্তী জীবনজি। গত ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপের ভারতের হয়ে প্রথমবার সোনা জেতেন দীপ্তি। জন্ম থেকেই তিনি আক্রান্ত ইনটেলেকচুয়াল ডিসএবিলিটিতে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মতো কথা বলতে পারেন না তিনি, মানিয়ে নিতেও সবার সঙ্গে, সমস্যা হয় তাঁর।
মেয়ের এমন সাফল্যের দিনে তাঁর মা ধনলক্ষ্মী জীবনজি আক্ষেপ করে শোনাচ্ছিলেন ছোটবেলায় তাঁদের কি কঠিন লড়াইটাই করতে হয়েছে। মেয়ের ওপর দিয়েও গেছে কত ঝড় জল। ধনলক্ষ্মীর কথায়, ‘ও সূর্যগ্রহণের সময় জন্মেছিল, ওর মাথাটা জন্মের সময় ছোট ছিল। আর ঠোঁট-নাকও স্বাভাবিক ছিল না। গ্রামের প্রত্যেকে এমনকি আত্মিয়রাও ওকে দেখলেই পাগল, বাঁদর এসব বলত। আমাদের বলেছিল ওকে অনাথাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে। আজ ওকে দেশের থেকে এত দূরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে দেখে সত্যি মনে হচ্ছে ও স্পেশাল চাইল্ড ’।
নিজের সংগ্রামের কাহিনি বলতে গিয়ে দিপ্তীর মা বলছেন, ‘আমার শ্বশুর যখন মারা যায় আমাদের ফার্ম বিক্রি করে দিয়েছিলাম সংসার চালানোর জন্য। আমার স্বামী দিনে ১০০-১৫০ টাকা রোজগার করত, তাই আমাকেও সংসারে সাহায্য করতে হত। দিপ্তী বরাবরই খুব শান্ত স্বভাবের আর খুব কম কথা বলে। যখন গ্রামের ছেলে মেয়েরা ওর পিছনে লাগত তখন ঘরে এসে কাঁদত। তখন আমি ওকে মিস্টি চাল, কখনও মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়াতাম খুশি করার জন্য’।
আরও পড়ুন-সিন্ধুরা পারেননি, পারলেন শরদরা! টোকিয়োর সাফল্য প্যারিসে টপকাল প্যারালিম্পিয়ানরা…
দিপ্তীর বাবা বলছেন, ‘আজকের দিনটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমায় কাজে যেতে হবে। ওটাই আমাদের রুজি রুটি। আমি সারাদিন ভাবছিলাম দিপ্তি প্যারিসে পদক জিতলে আমি আমার বন্ধু ড্রাইভারকে আর কয়েকজনকে খবর দেব আর তাঁদের আনন্দ করতে বলব। দিপ্তী সব সময় আমাদের আনন্দ দিয়েছে, আর এই পদক আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ’।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।