পাকিস্তান যে ইউরেনিয়াম প্রোগর্মের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালেই পরমাণবিক কর্মসূচি চালু করেছিল তা জানত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি আমেরিকার তরফে। এমনই জানা গিয়েছে সম্প্রতি ডিক্লাসিফাই হওয়া এক নথি থেকে। সেই সময় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পাঠানো বেশ কিছু টেলিগ্রাম এবং অভ্যন্তরীণ মেমোরেন্ডাম সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছে একটি এনজিও। তাতেই দেখা যাচ্ছে যে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রশাসন পাকিস্তানের ক্ষমতা প্রসঙ্গে অবগত ছিল।
এদিকে সেই সময় ইরানি বিপ্লপ ঘটছে। অপরদিকে ভারত-সোভিয়েত পার্টনারশিপ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল আমেরিকা। তাই তারা পাকিস্তানের উপর এই ইস্যুতে কোনও চাপ সৃষ্টি করেনি। প্রকাশ্যে আসা মার্কিন সরকারি নথিতে লেখা, 'পাকিস্তান খুব দ্রুত গতিতে গোপনীয় ভাবে পরমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার পথে হাঁটছে।' এই মেমোরেন্ডামটি লিখেছিলেন তত্কালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট হ্যারল্ড সন্ডার্স। এটি পাঠানো হয়েছিল তত্কালীন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি অফ ওসেন, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ারস অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যাফায়েরস থমাস পিকারিংকে। পরবর্তীতে এই মেমোরেন্ডামটি তত্কালীন সেক্রেটারি অফ স্টেট সাইরাস ভ্যান্সকে পাঠানো হয়েছিল।
এর প্রায় ২০ বছর পর ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পরীক্ষণের পর পাকিস্তান নিজেদের পরমাণু কর্মসূচি প্রকাশ্যে আনে। এদিকে পাকিস্তান যখন থেকে পরমাণু শক্তিধর হওয়ার চেষ্টা শুরু করে তখন সন্ডার্স ও পিকারিং পাকিস্তানের উপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবলেও পরে সেই বিষয়ে কোনও প্রস্তাব পেশ করেননি। পরবর্তীতে ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা কিছুটা ধামাচাপা পড়লে পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধআনমন্ত্রী জিয়া-উল হককে আমন্ত্রণও জানানো হয় আমেরিকায়।
এদিকে কার্টারের অধঈনে আমেরিকার অঘোষিত নীতি ছিল, 'আফগানিস্তানে সোভিয়ের প্রভাব বৃদ্ধি এবং ইরানের বিপ্লবের পরিস্থিতিতে আমরা পাকিস্তানের প্রতি আরও সমর্থন প্রদর্শন করতে চাই।' এই আভহে পরমাণু কর্মসূচির জন্য যদি পাকিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হত তাহলে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে আশঙ্কা ছিল আমেরিকার। প্রকাশিতে নথিতে উল্লেখিত, এই কারণেই নাকি কার্টার সেই সময় পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পাকিস্তানকে কোনও প্রশ্ন করেনি।
সন্ডারস এবং পিকারিংয়ের মেমো থেকে পরিষ্কার ছিল যে আমেরিকা জানত যে পাকিস্তান এমন একটি কেন্দ্র তৈরি করছে যা থেকে প্লুটোনিয়াম তৈরি করতে সক্ষম হবে পাকিস্তান। প্রতি বছর একটি করে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে তাহলে পাকিস্তান সক্ষম হবে। নথিগুলো থেকে এটাও প্রমাণিত যে পাকিস্তানের বাকি সব প্রকল্পের বিষয়েও অবগত ছিল আমেরিকা।