২০১৯ সালের মুসলিম নারী (বিবাহের অধিকার রক্ষা) আইন অনুসারে, ভারতে তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে। এরপরও যদি কোনও মুসলিম পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দেন, তাহলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই আইন কি আদৌ মানছেন মুসলিম পুরুষরা? বর্তমান নিয়ম অনুসারে, যদি কোনও মুসলিম পুরুষ তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। বুধবার এই বিষয়টি নিয়েই তথ্যতলাাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে শীর্ষ আদালত জানতে চায়, ২০১৯ সালের আইন কার্যকর হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কতজন মুসলিম পুরুষের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে এফআইআর করতে হয়েছে?
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এ নিয়ে যে নির্দেশ জারি করেছে, তা হল - '২০১৯ সালের সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে যে এফআইআরৃ-গুলি করা হয়েছে, আমরা তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাই। একইসঙ্গে আমাদের জানান, কোথাও এই আইনকে চ্যালেঞ্জ করে কোনও মামলা রুজু করা হয়েছে কিনা, কিংবা কোনও হাইকোর্ট এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কিনা। এই ধরনের মামলাগুলির ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যত চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, সেই নথিও আমাদের কাছে জমা দিন।'
এই বেঞ্চের অন্য সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেব বিচারপতি সঞ্জয় কুমার। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের সংশ্লিষ্ট আইন চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে মামলা রুজু করেছে একটি সংগঠন। সেই মামলার শুনানি চলাকালীনই উপরোক্ত নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
আদালত নির্দিষ্টভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৯ সালের ওই আইনের ৩ ও ৪ নম্বর ধারার অধীনে সারা ভারতের যেখানে যত এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তার সমস্ত তথ্য পেশ করতে হবে। আদালতকে জানাতে হবে সেই সংখ্যাটা ঠিক কত।
উল্লেখ্য, মুসলিম বিবাহিতা মহিলাদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ২০১৯ সালে আইন করে তিন তালাক নিষিদ্ধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। এই অনুসারে, যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দেন, তাহলে তাঁর সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে। এবং আদালত তাঁকে জরিমানাও করতে পারে।
এই আইনের অধীনে কারও বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হলে তাঁকে স্বীকৃত অপরাধে অভিযুক্ত হিসাবে গণ্য করা হবে। তাছাড়া, আইনের এই ধারা জামিন অযোগ্য। ফলত, বিয়ে করা বউকে তিন তালাক দিলে স্বামীকে হাজতবাস করতেই হবে।
এই আইন কার্যকর হওয়ার আগে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল। সেই রায় ঘোষিত হয়েছিল ৩-২ সংখ্য়া গরিষ্ঠতার নিরিখে।
২০১৯ সালের আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে যে সংস্থাগুলি, সেগুলি হল - সমস্থ কেরালা জামিয়াথুল উলেমা, জামাত উলেমা-ই-হিন্দ এবং মুসলিম অ্য়াডভোকেটস অ্য়াসোসিয়েশন (অন্ধ্রপ্রদেশ)।
মামলাকারীদের বক্তব্য হল, যে খানে ২০১৭ সালে শীর্ষ আদালতই তিন তালাককে বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল, সেখানে ২০১৯ সালে এই বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ফৌজদারি আইন প্রণয়ন অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়।
মামলাকারীরা বলছে, তিন তালাক দিয়ে এখন আর কেউ সঙ্গে সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন না। কিন্তু, তিন তালাক বলার জন্য তাঁদের হাজতবাস করতে হয়। এটা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মনে করেন মামলাকারীরা।