১৯৯০ সালের পর এই প্রথম, ২০২৪ সালে ১৯৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরব। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৭০। তবে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অনুসারে, এ বছরের মৃত্যুদণ্ডের আসল সংখ্যা কিন্তু আরও বেশি হতে পারে। কারণ দেশটি এর আগেও বাস্তবের তুলনায় কম সংখ্যক মৃত্যুদণ্ডের কথা জানিয়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ডের ট্র্যাক রাখছে অ্যামনেস্টি। তারাই দেখেছে যে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে, সৌদি আরব চিন এবং ইরানের পরে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বন্দীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
প্রতি বছর মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়ছেই
২০২২ সালে, সৌদি আরব ১৯৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। অ্যামনেস্টি অনুসারে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল এটি। ২০২২ সালের মার্চ মাসে, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন যে শরিয়া আইনের অধীনে প্রয়োজনীয় মামলাগুলি ছাড় দেশটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যাইহোক, ২০২২ সালের নভেম্বরে, কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মাদক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল।
আবার ১৯৯০ সালের আগে কতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তার সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন, কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে যে ১৯৮০ সালে ৬৩ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল। এর এক বছর আগে ইসলামপন্থী জঙ্গিরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে এই শাস্তি দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরবে বৃহত্তম মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যেখানে একদিনে ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আরও পড়ুন: (Sunita Williams News: সুনীতাদের আনতে মহাকাশে পাড়ি দিলেন আরও দুই নভশ্চর, ফেরা কবে?)
এই বছরের শুরুর দিকে, অ্যামনেস্টি সৌদি আরবের খসড়া দণ্ডবিধির দিকে নজর দিয়েছে, যেটিতে হত্যা, ধর্ষণ, ব্লাসফেমি এবং ধর্মত্যাগের মতো অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের মতো নিষ্ঠুর শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তারা দেখেছে যে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সৌদি কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়িয়েছে। প্রায়শই আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মান অনুসরণ করে না দেশটি। মাদক-সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আবার এই বছর বেড়ে গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসে প্রতি দুই দিনে একজন করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন। যেখানে ২০২৩ সালে মাত্র দুজনকে মাদক সম্পর্কিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
এমনকি রাজনৈতিক বিরোধীদের চুপ করানোর জন্যও কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড শাস্তি ব্যবহার করেছে। বিশেষ করে ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে সমর্থনকারী শিয়া সংখ্যালঘু নাগরিকদের এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ১৭ অগস্ট, সৌদি প্রেস এজেন্সি আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসের অভিযোগের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ অফিসারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে সৌদি।
অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, রিয়াদ সৌদি আরবকে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বন্ধ করতে এবং মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি ব্যবহার না করে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের জন্য পুনরায় বিচারের আয়োজন করার আহ্বান জানান। রিয়াদ আগে বলেছিলেন যে জনসাধারণের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন। তবে শুধুমাত্র তখনই এই শাস্তি দেওয়া হয়, যখন আর কোনও আইনি বিকল্প থাকে না।
২০২২ সালে, রাষ্ট্রপুঞ্জও সৌদি কর্তৃপক্ষকে মাদক অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া করা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু এনজিও রিপ্রিভের জন্য মৃত্যুদণ্ড বিরোধী প্রচেষ্টার নেতৃত্বদানকারী জিদ বাসিউনি বলেন, নতুন রেকর্ড দেখায় যে সৌদি আরব সে পথে হাঁটতে নারাজ।