ভারতকে শুল্কের ধাক্কা দিতে দিতে চিনের দিয়ে ঠেলে দিচ্ছিল আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন। আমেরিকারই বহু রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক এই দাবি করেছিল। এবং সেই দাবি সত্যি প্রমাণিত করেই ভারত ও চিন কাছাকাছি এসেছে। এই আবহে চিন সফরে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে রবিবার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন মোদী। (আরও পড়ুন: ভারতকে আক্রমণ USA-র, ইউক্রেন যুদ্ধকে 'মোদীর যুদ্ধ' আখ্যা ট্রাম্পের পরামর্শদাতার)
আরও পড়ুন: ভারতের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের জেরে কষ্ট পাচ্ছে আমেরিকানরা: মার্কিন ডেমোক্র্যাট হাউজ কমিটি
গালওয়ান সংঘাতের আবহে দীর্ঘদিন ভারত ও চিনের মধ্যে দূরত্ব বজায় ছিল। এখনও যে দুই প্রতিবেশী দেশ 'বন্ধু' হয়ে উঠেছে, এমনটা নয়। তবে সময়ের সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছে, মার্কিন শুল্কের চাপ থেকে বাঁচতে একে অপরকে প্রয়োজন হবে ভারত ও চিনের। এই আবহে ট্রাম্পের কাছে মাথা নত না করে জিনপিংয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন মোদী। (আরও পড়ুন: 'ভারতে পারমাণবিক বোমা ফেলো', লেখা ছিল মার্কিন স্কুলে হামলাকারীর বন্দুকে)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্কে চাপে ভারতের পোশাক শিল্প, স্বস্তি দিতে বড় পদক্ষেপ মোদী সরকারের
সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুরে হস্তক্ষেপের দাবি থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্যতা, এরপর শুল্ক নীতি নিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে পিষে ফেলার চেষ্টা করেছে আমেরিকা। আর সেই আমেরিকাই আবার ভারতকে জ্ঞান দিতে এসেছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে। গতকাল একটি সংবাদ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এমনই কাজ করেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। শুধু তাই নয়, তিনি ভারতকে 'অহঙ্কারী' বলে আখ্যা দেন। এরই সঙ্গে চিনের সঙ্গে ভারতের সখ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন নাভারো। আর এরপরই আজ ঘোষণা করা হল মোজী-জিনপিংয়ের বৈঠকের দিনক্ষণ। (আরও পড়ুন: ট্রাম্প ট্যারিফের ধাক্কায় থমকে জয়পুরের গয়না রফতানি, মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের)
গতকাল পিটার নাভারো বলেছিলেন, 'ভারতীয়রা এই ব্যাপারে (রাশিয়ার তেল কেনা) এত অহঙ্কারী... তাঁদের কথায়, 'এটা আমাদের সার্বভৌমত্ব। আমরা যার কাছ থেকে চাই, তেল কিনতে পারি।' ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। তাই তাদের গণতন্ত্রের মতো কাজ করা উচিত। গণতন্ত্রের পাশে থাকা উচিত, কর্তৃত্ববাদীদের পাশে থাকো। চিন আকসাই চিন দখল করেছিল, তারা তোমার বন্ধু নয়।'
উল্লেখ্য, মার্কিন শুল্ক নীতির আবহে ভারত অকল্পনীয় দ্রুততার সঙ্গে চিনের সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়েছে। চিনের বিদেশমন্ত্রী ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ভারতকে রেয়ার আর্থ থেকে সার বিক্রি করার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে চিন। মোদী চিনে যাচ্ছেন এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে। সেখানে শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও তাঁর দেখা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন শুল্ক নীতি এবং ভারত বিরোধী মনোভাবের জেরেই নয়াদিল্লি চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। চিনও বলছে, মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত। ভারতের ওপর অতিরিক্ত মার্কিন শুল্কের বিরোধিতা করেছে বেজিং। এমনকী ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমেরিকা যদি ভারত থেকে জিনিস না কেনে, তাহলে সেই জিনিস চিন কিনবে। ভারত-চিনের এই একজোট হওয়ার বিষয়টি এখন আর হজম হচ্ছে না আমেরিকার।
এর আগে বহু মার্কিন বিশ্লেকই ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, এর জেরে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পিছিয়ে যাবে বহু দশক। যে চিনকে মোকাবিলা করতে ভারতের সঙ্গে আমেরিকা সম্পর্ক ভালো করেছিল, সেই চিনের দিকেই ভারতকে ঠেলে দেবে আমেরিকা। আর এখন যখন সেটাই হয়ে গিয়েছে। তখন ভারতের ওপর আরও চোটপাট করে আক্রমণ শানাচ্ছেন ট্রাম্পের বাণিজ্য পরামর্শদাতা।