ইস্টার বা ইস্টার সানডে হল যিশুর পুনরুত্থানের দিন। তাই গোটা বিশ্বের খিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষজন অত্যন্ত উত্সাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দিনটা পালন করে থাকেন। নিউ টেস্টেমেন্ট অনুসারেস, রোমানদের হাতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার পরের তিন নম্বর দিনে, পবিত্র রবিবারেরই পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন যিশু। ইস্টার সানডে বা পবিত্র রবিবার হল খ্রিস্টিয় ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টানরা আজকের এইদিনে মৃত্যুর বিরুদ্ধে যিশুখ্রিস্টের বিজয় উদযাপন করে। খ্রিস্টে বিশ্বাসীদের কাছে এটি পুরাতন জীবনের অবসানের পরে নতুন জীবনের শুরুর প্রতীক।
পুনরুত্থানের এই পার্বণটি খ্রিস্টানদের জন্য এক দীর্ঘ ধর্মীয় পর্বের শেষ বা চূড়ান্ত পর্যায়। ইস্টারের আগের বিশ্বের বহু ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান, যিশুর উপবাসের অনুকরণে ৪০ দিনব্যাপী প্রার্থনা ও উপবাস করেন। বাৎসরিক এই উপবাস পর্বটি একটি বুধবারে শুরু হয়, যাকে ইংরেজিতে অ্যাশ ওয়েডনেসডে (Ash Wednesday) বলে ডাকা হয়। উপবাস পর্বটি সমাপ্ত হয় পুণ্য শনিবার, অর্থাত্ ইস্টার সানডের আগের দিন। উপবাসের শেষের সপ্তাহটিকে পবিত্র বা পুণ্য সপ্তাহ নাম দেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহের বৃহস্পতিবারটি হল মন্ডি থার্সডে (যা যিশুর লাস্ট সাপারকে চিহ্নিত করে), গুড ফ্রাইডে ( ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিন)। পুনরুত্থান পার্বণ একটি ররিবার পালিত হলেও এর সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় পর্বটি আরও আটটি রবিবার পর্যন্ত বজায় থাকে।
ইস্টারের দিনক্ষণ নিয়ে শুরুর দিকে নানা মত প্রচলিত ছিল। ‘স্প্রিং ইকুইনক্স’ বা মহাবিষুব-এর সময় এই উৎসব পালন করা হত। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার বছর নিয়েও মতান্বর রয়েছে। দুটি মতবাদ অনুসারে ৩৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রুশবিদ্ধ হন। তবে স্যার আইজাক নিউটন গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি মেপে সময়টাকে ৩৪ খ্রিস্টাব্দ বলে দাবি করেছিলেন।
এখন পশ্চিম ইউরোপের চার্চগুলি এই দিন স্থির করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মেনে, আর পূর্ব ইউরোপে অনুসরণ করা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। এবছর ১২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘ইস্টার সানডে’। মূলত খ্রিস্টানের উত্সব হলেও ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুসারে, ইহুদীদের উত্সব পাসওভার এবং মিশরীয় জিউ সম্প্রদায়ের মানুষের এক্সোডাস উত্সবের সঙ্গেও ‘ইস্টার’-এর যোগ রয়েছে।
নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, রোমান কর্তৃপক্ষের দ্বারা শুধুমাত্র এই কারণে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কারণ তাঁদের মনে হয়েছিল যিশু দাবি করছেন তিনি ‘ইশ্বরের সন্তান’। রোমান রাজ্যপাল পন্টিয়াস পিলাতের বিচারসভায় যিশুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহ, সিজারকে রাজস্বদানে বাধা ও নিজেকে রাজা ঘোষণা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিনদিনের মাথায় অলৌকভাবে তাঁর এই পুনরুত্থান প্রমাণ করে দিয়েছিল তিনি সত্যিই ইশ্বরের সন্তান। এইভাবেই ‘ইস্টার সানডে’ পালন হওয়া শুরু হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন চার্চগুলিতে শনিবার রাত থেকেই ইস্টারের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়ে যায়। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বাইরে এইদিন যিশুর পুনঃজন্মের প্রতীক হিসাবে এদিন ‘ইস্টার এগ’ বিতরণ করা হয়। যেগুলোতে নানা রঙ দিয়ে কারুকার্য করা হয়। আজকাল চকোলেট দিয়েও তৈরি ডিম্বাকৃতির এই ‘ইস্টার এগ’ বিতরণ করা হয়ে থাকে। ছোটদের জন্য রবিবার রাস্তায় রাস্তায় ‘ইস্টার বানি’ সেজে ঘুরে বেড়ানোর প্রথা রয়েছে-তাঁরা ছোটদের চকোলেট এগ উপহার দেয়। এছাড়াও নানান জায়গায় ইস্টার এগ নিয়ে মজার খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।
