বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের 'গার্ডিয়ান' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন সেই দেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। উত্তরপূর্ব ভারতকে 'ল্যান্ড লক' আখ্যা দিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন ইউনুস। সেই উত্তরপূর্ব ভারতকেই এবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার 'গেটওয়ে' আখ্যা দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। ২০২৫ সালের উত্তর-পূর্ব বিনিয়োগকারী শীর্ষ সম্মেলনের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন জয়শংকর। সেখানেই ভার্চুয়াল ভাষণে জয়শংকর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিনিয়োগকারীদের এই অঞ্চলের সুযোগ কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেন তিনি। (আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে 'হিন্দু বিরোধী' ভাষণ পড়শি দেশের সেনা কর্তার, খসে পড়ল মুখোশ)
জয়শংকর বলেন, 'উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে - 'প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার', অ্যাক্ট ইস্ট অথবা বিমসটেক। উত্তর-পূর্ব দিকটি আমাদের পাঁচটি প্রতিবেশীকে স্থলভাগে সংযুক্ত করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং আসিয়ানের মধ্যে সংযোগস্থল হল এই উত্তর-পূর্ব অঞ্চল। আমাদের সাম্প্রতিক অনেক উদ্যোগই নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের সাথে জড়িত, যা এই অঞ্চল থেকেই উদ্ভূত। আমরা দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি, যার মধ্যে কিছু আমাদের অতীত ইতিহাস থেকে উদ্ভূত।' এরপর জয়শংকর ভারত সরকারের 'পূর্বোদয়' প্রকল্পটির কথাও তুলে ধরেন নিজের ভাষণে।
উল্লেখ্য, রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন সফরে উত্তরপূর্ব ভারতের ৭ রাজ্যকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন ইউনুস। তিনি নাকি বলেছিলেন, 'উত্তর-পূর্বে ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। এই অঞ্চলে আমরাই সমুদ্রের দেখভাল করি (বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের গার্ডিয়ান)। এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। এটি চিনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে।' ইউনুসের এই মন্তব্যে প্রশ্ন ওঠে, ভারতের রাজ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যে চিনকে কেন 'আহ্বান' জানাচ্ছেন ইউনুস? তাঁর সেই মন্তব্যে নেপথ্যে থাকা আসল অর্থ কী? এদিকে এই সবের মাঝে ভারতের তরফ থেকে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে বিদেশে পণ্য পাঠাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বাংলাদেশের। আর এবার উত্তর-পূর্ব ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যের মধ্যমণি বানাতে চাইছে মোদী সরকার। অবশ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপর মোদী সরকারের ফোকাস ছিল বহু আগে থেকেই। এই কারণেই কলকাতা থেকে মায়ানমার হয়ে সরাসরি ব্যাঙ্কক পর্যন্ত মহাসড়কেরও পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও মায়ানমার গৃহযুদ্ধের জেরে সেই প্রকল্পটি মায়ানমারে আটকে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ যে উত্তর-পূর্ব ভারতে কোনও প্রভাব খাটাতে পারে, ইউনুসের এই ভুল ধারণা ভাঙতে এবার উঠে পড়ে লেগেছে মোদী সরকার। ট্রান্সশিপমেন্ট পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই ঢাকা বুঝতে শুরু করেছে, কে কার ওপর নির্ভরশীল। আর উত্তর-পূর্ব ভারতে বিনিয়োগকারীদের টেনে ভারত নীরবেই বাংলাদেশকে জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছে।