আপাতত তাহলে কি ইজরায়েলকেই প্রধান শত্রু বলে গণ্য করছেন কট্টরপন্থী ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা? শুক্রবার সেইরকমই বার্তা দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। রাইফেল হাতে নিয়ে 'নিশানা' করেছেন চিরশত্রু ইজরায়েলকে।
পাঁচ বছর পর এদিন, জুম্মাবারে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, 'শত্রুর সমস্ত পরিকল্পনা বানচাল' করে দিতে হবে। সমস্ত মুসলিম দেশেরই এখন 'একটাই শত্রু'! উল্লেখ্য, ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর লাগাতার হামলার মুখে কার্যত দিশেহারা অবস্থা হয়েছে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হেজবোল্লার সদস্যদের।
ইতিমধ্যেই হেজবোল্লার শত-শত জঙ্গি সদস্যের প্রাণ গিয়েছে। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন সংগঠনের প্রধান হাসান নাসারুল্লাহ। তাঁর মৃত্যুতে শুক্রবার তেহরানে শোকপালন করেন খামেনেই। শোকপালনের সেই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম নেতার সঙ্গে আরও অসংখ্য মানুষ যোগ দেয়।
এই অনুষ্ঠানে মুসলিম দেশগুলিকে কার্যত একজোট হওয়ার বার্তা দেন খামেনেই। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে ইয়েমেন, ইরান থেকে গাজা কিংবা লেবানন - মুসলিম দেশগুলিকে একজোট হয়ে নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে হবে।
খামেনেইয়ের বক্তব্য হল, আগ্রাসন রুখতে সব দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ইজরায়েল যা করেছে, তার জবাব দিতে ইরান দেরিও করবে না, আবার তাড়াহুড়োও করবে না।
'ইজরায়েলের উপর হওয়া হামলা বৈধ'
৮৫ বছরের খামেনেই আরও বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের তরফ থেকে ইজরায়েলের উপর যে হামলা চালানো হয়েছিল, তা 'বৈধ'। ঠিক ততটাই 'বৈধ' ছিল মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। যা ইরানের তরফ থেকে ছোড়া হয়েছিল।
যদিও সূত্রের দাবি, মঙ্গলবারের ওই হামলা বিফল হয়েছিল। তবুও এই হামলার ফলে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট অংশে সামগ্রিকভাবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খামেনেইয়ের কথায়, 'কয়েক রাত আগে আমাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে অভূতপূর্ব আক্রমণ করা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ বৈধ ও ন্যায্য ছিল।'
খামেনেইয়ের আরও দাবি, ইজরায়েল লাগাতার সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলা চালিয়ে এবং হেজবোল্লা নেতাকে খুন করে যুদ্ধ জিতে যাওয়ার 'ভান' করছে। কিন্তু, এর ফলে আদতে তারা তেহরানের শক্তি আরও বাড়াচ্ছে!
এই সমগ্র ঘটনাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা। তাঁর অভিযোগ, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চলের ফায়দা লুটতেই আমেরিকা ইজরায়েলকে সাহায্য করছে।
খামেনেইয়ের যুক্তি, মধ্যপ্রাচ্য়ের দেশগুলি থেকে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ করতে ইজরায়েলকে প্রবেশ পথ হিসাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু, তাঁদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইজরায়েল কোনও দিন হেজবোল্লা বা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হতে পারবে না বলেও দাবি করেছেন তিনি।
একইসঙ্গে, লেবাননের 'যোদ্ধা'দের উদ্দেশ্যে ইরানের সুপ্রিম নেতা বার্তা দেন, রক্তপাত দেখে তাঁরা যেন দুর্বল না হয়ে পড়েন। তাঁরা যেন ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের যুদ্ধ চালিয়ে যান।