পশ্চিমবঙ্গে আরজি কর আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই, পড়শি ওডিশায় সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নার্সিং স্টাফরা বিক্ষোভে সামিল হলেন। ১০ দাবি সামনে রেখে বুধবার থেকে দু'দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত নার্সরাই মূলত এই আন্দোলন করছেন। এর ফলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ওডিশা সরকারের আনা নয়া 'জরুরি পরিষেবা (অব্যাহত) আইন' বা ESMA লঙ্ঘন করারও অভিযোগ উঠছে। তারপরও নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছেন নার্সরা।
প্রসঙ্গত, আরজি কর আন্দোলনের আবহে বাংলার সরকার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না করলেও পড়শি ওডিশার নয়া বিজেপি সরকার কিন্তু আন্দোলনের গন্ধ পেতেই তড়িঘড়ি নতুন আইন (ESMA ) বলবৎ করেছে। তাতেও অবশ্য লাভ হয়নি বিশেষ।
ওডিশায় সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কর্মরত নার্সদের ১০ দফার দাবির মধ্যে অন্যতম হল - চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ স্থায়ী করা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করা।
আন্দোলনকারীরা ওডিশা নার্সিং এমপ্লয়ি অ্য়াসোসিয়েশনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি, দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের দাবিগুলি পূরণ না করা হলে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিষেবা একেবারে স্তব্ধ করে দেবেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সভানেত্রী শুচিস্মিতা দাস জানিয়েছেন, কেবলমাত্র জরুরি বিভাগ, আইসিইউ এবং অপারেশন থিয়েটারেই নার্সরা কাজ করছেন। অন্যান্য সমস্ত পরিষেবা আপাতত বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।
তাঁদের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে শুচিস্মিতা আরও জানান, 'রাজ্যের পূর্বতন বিজেডি সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে দেওয়া সত্ত্বেও অসংখ্য নার্সিং স্টাফ তাঁদের বকেয়া আর্থিক সুবিধাগুলি এখনও পাচ্ছেন না। এমন অনেক প্রবীণ নার্স রয়েছেন, যাঁরা অনেক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নার্সদের সমতুল্য, এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার থেকেও কম বেতন পাচ্ছেন।'
সংগঠনের সভানেত্রী আরও বলেন, 'আমরা চাই যোগ্যতা অনুসারে নার্সিং অফিসারদের যথাক্রমে সিনিয়র নার্সিং অফিসার এবং অ্যাসিসট্যান্ট নার্সিং সুপারিনটেন্ডেন্ট হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হোক। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে কমিউনিটি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়োগ করা হোক। সেইসঙ্গে, এত দিন যাঁরা চুক্তিভিত্তিক পরিষেবা দিয়ে এসেছেন, তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হোক।'
উল্লেখ্য, সরকারি ব্যবস্থাপনার অধীনে ওডিশার স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে কোনওভাবে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই, গত মাসে রাজ্য সরকারের তরফে জরুরি পরিষেবা (অব্যাহত) আইন বলবৎ করা হয়। মূলত, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের যাতে কর্মবিরতি, আন্দোলন, বিক্ষোভ প্রভৃতি থেকে বিরত রাখা যায়, তার জন্যই এই পদক্ষেপ বলে দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নার্সিং স্টাফদের সংগঠনের তরফে গত ২৭ অগস্ট থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই সরকারের তরফে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
এদিকে, রাজ্য সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওডিশার স্বাস্থ্য মন্ত্রী মুকেশ মহালিঙ্গ জানান, বুধবারই নার্সিং স্টাফদের সংগঠনকে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।
মন্ত্রীর আশ্বাসবাণী, 'ওঁদের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছি। আলোচনা সফল হবে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা কোনওভাবেই বিঘ্নিত হবে না।'