প্রায় আড়াই দশক পর দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বিজেপি। আর জয়ে ফিরতেই ফের একবার রাজধানীর বাসিন্দারা কবে, কী খাবেন, তা নিয়ে খবরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের। ফের একবার রাজধানী দিল্লিতে মাংস বিক্রেতাদের উপর শুরু হয়েছে শাসক শিবিরের হম্বিতম্বি। ফরমান জারি করা হয়েছে, প্রতি মঙ্গলবার নাকি মাংস বিক্রি করা যাবে না!
এই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে নানা কনটেন্ট। আর এই সবকিছুর নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন - দিল্লির পটপড়গঞ্জ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক রবিন্দর সিং নেগি ওরফে রবি নেগি।
শোনা যাচ্ছে, বিধায়ক মশাই তাঁর নিজের বিধানসভা এলাকায় ঘুরে ঘুরে মাংস বিক্রি নিয়ে ফরমান জারি করছেন এবং সোশাল মিডিয়াতেও নিজের যুক্তি সাজিয়ে প্রচার করছেন।
এলাকার মাংস বিক্রেতাদের উদ্দেশে তাঁর সাফ বার্তা, সেখানে মঙ্গলবার করে মাংস বিক্রি করা যাবে না। বন্ধ রাখতে হবে মাংসের দোকান। তাতে বিক্রেতার আর্থিক ক্ষতি হল, কিংবা সহ-নাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসরে (খাদ্য়াভ্যাসের স্বাধীনতা) আগ বাড়িয়ে নাক গলানো হল কিনা, তাতে অবশ্য বিধায়ক মশাইয়ের কিস্যু যায় আসে না।
তাঁর আরও নির্দেশ, প্রত্যেকটি মাংসের দোকানে মাংস ঢেকে রাখতে হবে। এই বিষয়ে বিধায়কের এক দাপুটে ভিজিয়ো সোশাল মিডিয়ায় বেজায় ভাইরাল হয়েছে। তিনি নিজেই সেই ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন।
তাতে তাঁকে এলাকারই কিছু মাংসের দোকানে গিয়ে বিক্রেতাদের নির্দেশ দিতে দেখা গিয়েছে। বাদ যাননি মাছ বিক্রেতারাও। তাঁকে ওই ভাইরাল ভিডিয়োয় বলতে শোনা গিয়েছে, 'মঙ্গলবার করে দোকান বন্ধ রাখো। মঙ্গলবার বন্ধ করতে কী সমস্যা? সমস্যা আছে? তাহলে পুরোপুরি দোকান বন্ধ করে দাও। এটা ঢেকে রাখো। এভাবে খোলা রেখো না। যারা খায় না, তারা তো পছন্দ করে না।'
এখানেই শেষ নয়। এই বিষয়টিকে নিয়ে রীতিমতো ইস্যু তৈরি করতে চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি বিজেপির ওই বিধায়ক। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, 'পটপড়গঞ্জ বিধানসভা এলাকায় মঙ্গলবার খোলা চিকেন শপ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি মন্দিরে আসা-যাওয়া করার সময় ভক্তদের অনুভূতিতে আঘাত করছিল। সনাতন সংস্কৃতিতে ধর্মীয় স্থানের আশেপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা রক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমন পবিত্র স্থানের আশেপাশে এই ধরনের দোকান চালানো আস্থা ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে।'
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও একটি বিখ্যাত আমিষ পণ্য বিপণনীকে এই ধরনের ফরমান বা ফতোয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন তিনি।