প্রথাগত রীতির গণ্ডি থেকে কিছু বের হলেন প্রধান বিচারপতি এনভি রামনা। বুধবার তেলুগু ভাষায় দম্পতির মধ্যস্থতা করলেন তিনি।সুপ্রিম কোর্টের অফিসিয়াল ভাষা ইংরাজি। কিন্তু বুধবার বিকেলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দৃশ্যটি ছিল বেশ অন্যরকম। অভিযোগকারী মহিলা ইংরাজি বোঝেন না জেনে তেলেগু ভাষাতেই কথা বললেন প্রধান বিচারপতি।অন্ধ্রপ্রদেশের এই দম্পতি ২০০১ সাল থেকে আলাদা থাকেন। স্ত্রীর দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন এই ব্যক্তি। কিন্তু তারপরেও গত ১৮ বছর ধরে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছিলেন তিনি।অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন ওই ব্যক্তি। তাঁর স্ত্রীর কোনও উপার্জন ছিল না। ২০০১ সালে তাঁদের বিচ্ছেদের এক মাস পরে, তিনি নিষ্ঠুরতার অভিযোগ তুলে স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির (আইপিসি) 498A ধারায় অভিযোগ দায়েক করা হয়েছিল।২০০২ সালে, ওই ব্যক্তিকে গুন্তুর ট্রায়াল কোর্ট দোষী সাব্যস্ত করে এবং এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। উচ্চ আদালত অবশ্য তাঁর জেলের মেয়াদ স্থগিত করে। এদিকে, স্ত্রী খরপোষ দাবি করে পারিবারিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। ২০০৩ সাল থেকে ওই ব্যক্তির থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ টাকা নিতে শুরু করেন মহিলা।২০১০ সালে, হাইকোর্ট আদালত ওই ব্যক্তির শাস্তি কমায়। জেলে অভিযুক্ত অবস্থায় থাকার সময়টুকুই শাস্তি হিসাবে ধরা হয়। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।এতে অসন্তুষ্ট হন মহিলা। স্বামীর জেলের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, 'সেভাবে তাঁর কোনও শাস্তিই হল না। আর চাকরিটা এখনও টিকে আছে কেন?'২০১২ সালে শীর্ষ আদালত মধ্যস্থতার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সম্প্রতি, সিজেআই রমনা মীমাংসার জন্য আরও একবার প্রচেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু আইনজীবীরা জানান যে মহিলা এখনও স্বামীর জেলের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য জোর দিয়ে চলেছেন।প্রধান বিচারপতি এবং জাস্টিস এএস বোপান্না ও সূর্য কান্তের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জানায়, ওই ব্যক্তিকে যদি জেলবন্দি করা হয়, তবে তিনি তাঁর সরকারি চাকরি হারাবেন। তারপরে ওই মহিলা ও তাঁর ছেলের কোনও খরপোষের টাকা আসবে না। তেলেগু ভাষাতেই কথা বলেন প্রধান বিচারপতি রামনা।ওই দম্পতি আবার সব মিটমাট করে একত্রে থাকতে চান কিনা প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তাতে সায় দেন ওই ব্যক্তি। মহিলাও সায় দেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আচরণ আর না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করে দেন প্রধান বিচারপতি।আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তাঁদের অবস্থান আদালতের কাছে জানাতে বলা হয়েছে। অর্ডারে বলা হয়েছে, 'অতীতের সমস্যা ভুলে একত্রে আবার নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই পক্ষ। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য অনুমোদন দেওয়া হল তাঁদের।'