সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে অশান্তির মধ্য়েই ছত্তিশগড়ের ওয়াকফ সম্পত্তির হাল-হকিকত জানতে সে রাজ্যের রাজধানী রাইপুরে পৌঁছল কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল। জানা গিয়েছে, ওই প্রতিনিধিদলে মোট ১০ জন সদস্য রয়েছেন। নয়া সংশোধিত ওয়াকফ আইনের আওতায় তাঁরা রাজ্যের ওয়াকফ সম্পত্তির পর্যালোচনা করবেন।
যা নিয়ে ইতিমধ্য়েই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। কারণ, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানই জানাচ্ছেন, একাধিক ওয়াকফ সম্পত্তি শপিং মলে রূপান্তরিত করা হতে পারে! এবং তাতে নাকি মুসলিম সম্প্রদায়েরই লাভ হবে। অন্যদিকে, তাঁকে বিজেপির ক্রীতদাস বলে তোপ দেগেছে রাজ্য যুব কংগ্রেস নেতৃত্ব।
ঘটনা প্রসঙ্গে আরও জানা গিয়েছে, সরাসরি দিল্লি থেকে আসা এই দলের সদস্যরা রাজ্যের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ও সম্পদের বিস্তারিত হিসাব করছেন। যা নয়া আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্য়ে থাকছে - ওয়াকফের হাতে থাকা অসংখ্য জমি, ভবন, বাজার থেকে শুরু করে যাবতীয় সম্পত্তি ও সম্পদ। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এর ফলে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্য়ালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বচ্ছতা বাড়বে। তাঁরা ওই সম্পত্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পেয়ে যাবেন।
গত বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রের ওই বিশেষ পর্যবেক্ষক দল তাদের কাজ শুরু করে দেয়। সেই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন ছত্তিশগড় ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্য়ান ড. সালিম রাজ! তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সর্বক্ষণই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা গত বৃহস্পতিবার রাইপুরের টিকরাপাড়া এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক ফতেহ শাহ মার্কেট ঘুরে দেখেন। ছত্তিশগড়ের ওয়াকফ সম্পত্তিগুলির মধ্যে এই বাজার অন্যতম।
সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি ছড়ালেও ড. সালিম রাজ কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এই পরিদর্শনের ফলে সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা যাবে এবং সমগ্র সম্প্রদায়ের কল্যাণে যাতে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করা যায় এবং সেগুলির নিরাপত্তা যাতে আরও কঠোর করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করা যাবে।'
এই কেন্দ্রীয় পরিদর্শন সম্পর্কে ড. সালিম রাজ আরও বলেন, 'গত ৭ এপ্রিল দিল্লির প্রতিনিধিরা ছত্তিশগড় পৌঁছন। এবং তাঁরা মাহাসামুন্দ বালোদাবাজার এবং রাইপুর জেলার বিভিন্ন ওয়াকফ সম্পত্তি পরিদর্শন করেন। তাঁরা দিল্লি ফিরে যাওয়ার পরই এই পরিদর্শন নিয়ে তাঁরা কী রিপোর্ট দিলেন, সেটা জানা যাবে। এমন কিছু সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলি এখন আর সেভাবে লাভজনক নেই, সেগুলিকে হয়তো শপিং মলে রূপান্তরিত করা হতে পারে। তাতে কেবলমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ই লাভবান হবে। তাই এক্ষেত্রে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।'
যদিও ড. সালিম রাজের এই যুক্তি মানতে পারছেন না যুব কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং ছত্তিশগড় মুসলিম মহাসভার অন্যতম সদস্য ফাহিম শেখ। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি সংশোধিত ওয়াকফ আইন মানেন না। এমনকী, ড. সালিম রাজকেও বিজেপির ক্রীতদাস বলে তোপ দেগেছেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি ড. সালিম রাজকে খুব ভালো করেই চেনেন। ওই ব্যক্তি কখনও মুসলিম সমাজের ভালো করতে পারেন না বলে অভিযোগ ফাহিমের।
ফাহিম জানান, অতীতে মুসলিম সমাজের ব্যক্তিরাই সম্প্রদায়ের সকলের কল্যাণের স্বার্থে জমি দান করেছিলেন। নয়া বিল কার্যকর করে সেইসব জমিই ছিনিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। যেটা এতদিন পর্যন্ত আইনত সম্ভব ছিল না।