সদ্য যাঁরা কুড়ির কোঠায় পা দিয়েছেন, এবং নিজেদের পড়াশোনা শেষ করে রোজগার করতে শুরু করেছেন, সেই 'ইয়ং অ্য়াডাল্ট' বা তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা কীভাবে নিজেদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারেন, তা নিয়ে নিজের এক্স হ্য়ান্ডেলে একটি পোস্ট করেছিলেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা, পেশাদার প্রযুক্তিবিদ এক ব্যক্তি।
কিন্তু, সেই একটিমাত্র পোস্টের জেরে তাঁকে যে এভাবে বিপাকে পড়তে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি তিনি। নেট ইউজারদের চরম সমালোচনার মুখে পড়ে কার্যত এটাই বললেন ওই ব্যক্তি।
যাঁকে নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তাঁর নাম শোভিত শ্রীবাস্তব। গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন।
তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের উদ্দেশে লেখেন, 'যদি আপনি সদ্য কুড়ির কোঠায় পা দেওয়া একজন ব্যক্তি হন, তাহলে সেইসব জিনিসের উপর খরচ করতে কুণ্ঠা বোধ করবেন না, যা আপনার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। আপনি সেই ম্যাকবুক, এনসি (শব্দ নিরোধক) হেডফোন কিনুন, জিমের সদস্যপদ নিন, একজন পরিচারিকাকে রাখুন - যিনি আপনার খাবার রান্না করে দেবেন এবং আপনার ঘর পরিষ্কার রাখবেন, সেই সমস্ত বই কিনুন যা আপনি কিনতে চান...!'
শোভিতের এই পোস্ট হু হু করে এক্স হ্যান্ডেলে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে ভাইরাল হয়। এক্স ইউজারদের একাংশ তাঁর এই মতামতের সঙ্গে সহমত পোষণ করলেও অধিকাংশই সমালোচনা করেন।
এই সমালোচনার নেপথ্য়ে বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়। অনেকেই বলেন, শোভিত যা বলছেন, তা একেবারেই অবাস্তব। বিশেষ করে সেইসব পরিবারের সন্তানদের কাছ, যারা নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত। একমাত্র উচ্চবিত্ত কোনও পরিবারের সন্তান, যাঁর কাঁধে কোনও দায় বা দায়িত্ব নেই, তিনিই এমন সব জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
শোভিত অবশ্য নিজেও সেটা পরে স্বীকার করেছেন, যে তিনি এই দিকটা ভেবে দেখেননি!
অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, শুধুমাত্র ম্যাকবুক কিনলেই কীভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়? কেউ কেউ আবার পরিচারিকা শব্দটির ব্যবহার নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের মতে, ওই সম্বোধন অসম্মানজনক। শোভিতের 'গৃহ সহায়িকা' জাতীয় কোনও শব্দ ব্যবহার করা উচিত ছিল।
নিজের পোস্টে এমন অসংখ্য কমেন্ট দেখে শেষমেশ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেন শোভিত। গত ১ জানুয়ারি এই প্রেক্ষিতে আরও একটি পোস্ট করেন তিনি।
শোভিত জানান, অল্পবয়সী যে ছেলেমেয়েরা সদ্য প্রোগ্রামার হিসাবে কাজ শুরু করেছেন, মূলত তাদের কথা মাথায় রেখেই ওই পোস্ট করেছিলেন তিনি। যাঁদের শুরু থেকেই ভালো রোজগারপাতি হয়।
শোভিতের বক্তব্য, তিনি যেহেতু এই ধরনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই মূলত মেলামেশা করেন, তাই তাঁদের কথাই তাঁর মনে হয়েছিল। কিন্তু, তাঁর সেই পোস্টের যেসমস্ত ব্যাখ্য়া করা হচ্ছে, সেটি যেভাবে একটি বিস্তৃত অংশের মধ্য়ে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না এবং তেমনটা যে ঘটতে পারে, তিনি তা ভাবেননি।
এমনকী, তাঁর এই পোস্ট নিয়ে যেভাবে অনলাইন পোর্টালগুলি খবর করেছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শোভিত। তাঁর বক্তব্য, তিনি সমাজের সকলের উদ্দেশে ওই পরামর্শ দেননি। বস্তুত, কোনও পরামর্শই এভাবে সকলের উদ্দেশে সমানভাবে দেওয়া যায় না।
সবশেষে শোভিত ইঙ্গিত দিয়েছেন, এবার থেকে সোশাল মিডিয়ায় কোনও পোস্ট করার আগে তিনি আরও বেশি করে সচেতন ও সতর্ক থাকবেন।