শুধু চলতি বছরেই বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে ২,২০০টি হিংসার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারত। যদিও সেই দাবি খারিজ করে দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করার কয়েক ঘণ্টার পরেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস উইংয়ের তরফে দাবি করা হল যে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত হিন্দু-সংখ্যালঘুদের উপরে ১৩৮টি হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। আর অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে ৫ অগস্ট থেকে ৮ অগস্টের মধ্যে। যে সময় বাংলাদেশে কোনও সরকার ক্ষমতায় ছিল না। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কারণে সেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাতে ধর্মীয় রং চড়ানো হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে ‘বিভ্রান্তিকর এবং অতিরঞ্জিত’ তথ্য না ছড়ানোর আর্জি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
২,২০০ নয়, হামলার ঘটনার সংখ্যা ১৩৮, দাবি বাংলাদেশের
নিজেদের যুক্তির স্বপক্ষে বাংলাদেশ সরকারের তরফে কয়েকটি পরিসংখ্যান তুলে ধরারও চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইংয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’-র (স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থা বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের উপরে ১৩৮টি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। হামলা চালানো হয়েছে ৩৬৮টি বাড়িতে। আহত হয়েছেন ৮২ জন।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। যারা দোষী, তাদের শাস্তি প্রদান করতে বদ্ধপরিকর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের পতনের আগেরদিন (৪ অগস্ট) থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৯৭টি মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
হাসিনার পরপরই বেশি হামলার ঘটনা, বলল বাংলাদেশ সরকার
আর সেইসব ঘটনাগুলির মধ্যে বেশিরভাগই ৫ অগস্ট থেকে ৮ অগস্টের মধ্যে ঘটেছে বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের যুক্তি, হাসিনার পতনের (৫ অগস্ট বাংলাদেশ ছা়ড়েন হাসিনা) পরে সেইসময় বাংলাদেশে কোনও সরকার ছিল না। তাছাড়াও ধর্মীয় কারণে নয়, অধিকাংশ হামলাই রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
'পাকিস্তানের কয়েক গুণ বেশি ঘটনা বাংলাদেশে'
যদিও ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে যে পরিসংখ্যান প্রদান করা হয়েছে, তাতে ছবিটা অত্যন্ত শোচনীয়। সংসদে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের থেকেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনা কয়েকগুণ বেশি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে এরকম ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪৭। পাকিস্তানে সেটা ২৪১ ছিল। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৩০২টি এরকম ঘটনা ঘটেছিল। আর পাকিস্তানে ঘটেছিল ১০৩টি। আর ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে ২,২০০টি হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। আর অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানে সেই সংখ্যাটা ছিল ১১২।