২০২০ সালে মহারাষ্ট্র সরকার তাঁকে ‘ইয়ং ফার্মার অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল। হোলির আগের দিনে সরকারের বিরুদ্ধেই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হলেন সেই কৃষক কৈলাস অর্জুন নাগাড়ে (৪৩)। বৃহস্পতিবার সকালে বুলঢানা জেলার শিবনি আরমাল গ্রামের তাঁর নিজের জমিতে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। নোটে তিনি লিখে গিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যেন তাঁর মৃতদেহ সরানো না হয়। তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে হাজার হাজার কৃষককে। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী বা জেলাশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করলে বা আশ্বাস পূরণ না করলে তাঁরা দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যেতে দেবেন না। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিসের সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: FB-তে বন্ধুত্ব, টাকা চেয়ে ছবি ফাঁসের হুমকি যুবকের, উদ্ধার শিক্ষিকার ঝুলন্ত দেহ
অর্জুন বহু বছর ধরে খড়কপূর্ণ জলাধার থেকে ১৪টি গ্রামে সেচের জলের জন্য দাবি করে আসছিলেন। গত বছর এই দাবিতে তিনি ১০ দিনের অনশনও করেছিলেন। তবে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। মৃত কৃষকের স্ত্রী সুশীলা নাগাড়ে স্বামীর মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘সরকারের অবহেলার কারণেই আমার স্বামী এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি কৃষকদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু, প্রশাসন কিছুই করেনি। যদি তারা সময়মতো ব্যবস্থা নিত তাহলে আজ আমার স্বামী বেঁচে থাকতেন।’
তথ্য অনুযায়ী, অর্জুনের পকেটে থেকে তিন পাতার একটি নোট পাওয়া গিয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রশাসন কৃষকদের সমস্যা উপেক্ষা করছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যেন আমার মৃতদেহ সরানো না হয়।’ জানা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের একজন সুপরিচিত কৃষক নেতা ছিলেন অর্জুন। কৃষকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। হাজার-হাজার কৃষক প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের সভাপতি হর্ষবর্ধন সাপকাল রাজ্যের মহায্যুতি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সরকার কৃষকদের প্রকৃত সমস্যাগুলিকে উপেক্ষা করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে ব্যস্ত। অর্জুন কৃষকদের অধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন। কিন্তু, তাঁর উদ্বেগের সমাধান করার পরিবর্তে সরকার তাঁকে এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে।
বুলঢানার কৃষক সংগঠন ক্রান্তি কিষাণ সংগঠনের নেতা রবিকান্ত টুপকার এই ঘটনাকে সরকারের ব্যর্থতার পরিণতি বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি এটিকে সরকারের নীতির কারণে একটি হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, কৃষকদের সমর্থন করার পরিবর্তে বর্তমান সরকার তাঁদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারকে অবিলম্বে এনিয়ে জবাবদিহি করতে হবে এবং হত্যার জন্য মামলা রুজু করতে হবে বলে তিনি দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, অর্জুনের পরিবারে রয়েছেন তাঁর বাবা, স্ত্রী এবং তিন সন্তান।