অসাম্য এড়াতে ইতিপূর্বে যে পদক্ষেপ করেছিল পূর্বতন ইন্দিরা গান্ধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ইস্যুতে আবারও একবার সেই একই পদক্ষেপ করার পক্ষে একজোট হওয়ার বার্তা দিল প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারত। এক্ষেত্রে 'প্রায়' শব্দটি ব্যবহার করতেই হচ্ছে, কারণ - এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতীয় এই জোটে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর কোনও প্রতিনিধিত্ব চোখে পড়েনি। বরং, পঞ্জাব এই ইস্যুতে দক্ষিণ ভারতীয় জোটের পাশে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ইস্যুতে প্রথম বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট 'জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি'। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই বৈঠকে যোগদান করেন চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং এক রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্ট্যালিন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন, তেলঙ্গনার কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, পঞ্জাবের আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার।
তাঁদের সকলের উপস্থিতিতে এদিনের এই বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাস করানো হয়। তাতে বলা হয়, লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত বিষয়টি আরও ২৫ বছরের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হোক। কারণ, দেশের সামগ্রিক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্যমাত্রায় এখনও পৌঁছানো যায়নি। বস্তুত, বর্তমানে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্য়ে জনবিন্যাসের সমতা নেই। তাই আগামী ২৫ বছরের জন্য এই প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হোক।
প্রস্তাবে নির্দিষ্ট করে আরও বলা হয়েছে, 'যে সমস্ত রাজ্য জন্মহার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল ভাবে রূপায়িত করতে পেরেছে, তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।'
উল্লেখ্য, এই একই কারণে অতীতে ইন্দিরা গান্ধী এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকারও লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস দুই দফায় ২৫ বছর করে স্থগিত করে দিয়েছিল। কিন্তু, বর্তমান বিজেপি সরকার এবার আর সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করতে চায় না বলেই দাবি সূত্রের।
অভিযোগ হল, জনসংখ্য়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গোটা দেশের হলেও গোবলয়ে - যেখানে বিজেপির ভোটভিত্তি তুলনামূলক অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়, সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপর সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। উলটো দিকে, দক্ষিণ ভারত এই বিষয়ে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে।
ফলত, এখন যদি জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়, তাহলে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেও দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব লোকসভায় কমে যাবে। অন্যদিকে, দায়িত্ব পালন না করা সত্ত্বেও উত্তরের গোবলয়ের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। তাতে সরাসরি বিজেপি লাভবান হবে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর সেই কারণেই মোদী সরকারের এই পদক্ষেপ ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্ট্যালিন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই দক্ষিণ ভারত এই ইস্যুতে একজোট হচ্ছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত মোদী সরকারের জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নাইডু এই দক্ষিণ ভারতীয় জোট থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর শিবসেনা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, তিনি আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের স্বার্থে দক্ষিণ ভারতীয় এই জোট সামিল হবেন।
অন্যদিকে, এদিনের বৈঠকে যোগ দিয়ে তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত বলেন, 'উত্তর ভারত আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করবে। বিজেপি যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস করে, তবে দক্ষিণ ভারত তার রাজনৈতিক কণ্ঠ হারাবে।'
কেরলের মুখ্য়মন্ত্রী বিজয়ন বলেন, 'আমাদের উপর আসন পুনর্বিন্যাসের খাঁড়া ঝুলছে। মোদী সরকার কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই নিজেদের মতো করে আসন পুনর্বিন্যাস করতে সক্রিয় হয়েছে। এমন পদক্ষেপ সাংবিধানিক বিধি এবং গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।'