জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভা কেন্দ্রগুলির বা আসনের পুনর্বিন্যাস হলেও তাতে তামিলনাড়ু-সহ ভারতের দক্ষিণী রাজ্যগুলির একটিও আসনও কমবে না। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০৫) প্রতিশ্রুতির এই বার্তা শোনা গেল খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গলায়!
এদিন কোয়েম্বাটোর, তিরুভান্নামালাইয়ে দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এই ইস্যুতে মুখ খোলেন অমিত শাহ। তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের কার্যত আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি।
শাহ বলেন, 'আমি দক্ষিণ ভারতের মানুষকে আবারও আশ্বস্ত করতে চাই। আপনাদের জানাতে চাই - প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আপনাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেছেন। (পুনর্বিন্যাসের ফলে) যাতে একটিও আসন না কমে, তিনি সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। পুনর্বিন্যাস যাই হোক না কেন, দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলি ন্যায্য অংশীদারিত্বই পাবে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।'
উল্লেখ্য, আসন পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপিবিরোধী দলগুলির মধ্যে আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এমনকী, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন বর্তমান প্রেক্ষাপট বিচার করে একটি মেগা মিটিং পর্যন্ত করে ফেলেছেন। এবং এই ঘটনা যে একেবারেই তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণী রাজ্যগুলির স্বার্থবিরোধী, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
সেই আবহেই বুধবার এ নিয়ে পালটা বার্তা দিতে হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, 'আজই একটি বৈঠক করা হবে। যেখানে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, যাতে পুনর্বিন্যাসের ফলে দক্ষিণ ভারত কোনও নেতিবাচক প্রভাবের শিকার না হয়। তামিলনাড়ুর মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ছেলে (উদয়নিধি স্ট্যালিন) মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।'
এরপরই সরাসরি এম কে স্ট্যালিকে উদ্দেশ করে শাহ বলেন, 'মিস্টার স্ট্যালিন, মোদী সরকার লোকসভাতেই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নির্দিষ্ট অনুপাতের নিরিখে পুনর্বিন্যাস করা হলেও তাতে দক্ষিণের রাজ্যগুলি একটি আসনও কমবে না।'
তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, দক্ষিণী মানুষের মধ্যে এই ইস্যুটি নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, দক্ষিণ ভারতের জনসংখ্যা উত্তর ভারতের হিন্দি বলয়ের তুলনায় অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। ফলে যদি সত্যিই জনসংখ্যার নিরিখে আসন ভাগ করা হয়, তাহলে সহজ হিসাব বলছে, দক্ষিণের আসন সংখ্যা উত্তর ভারতের জনবহুল হিন্দি বলয়ের থেকে কমে যাওয়ারই কথা।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বিশ্লেষণ হল, এটি আদতে মোদী সরকারের একটি বিরাট রাজনৈতিক কৌশল। দক্ষিণের মানুষ এখনও দেশের অন্যান্য বিভিন্ন অংশের মানুষের মতো বিজেপিকে ঢালাও সমর্থন করেনি।
এই অবস্থায় যদি পুনর্বিন্যাসের নামে দক্ষিণ ভারতের আসন কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সংসদে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত যেমন আরও বেশি হবে (কারণ - গোবলয় ও হিন্দি বলয়ে তাদের প্রভাব বেশি এবং সেখানকার আসনও বেশিই হবে), তেমনই সংসদে দক্ষিণের মানুষের প্রতিনিধিত্বও কমে যাবে। আর, যেকোনও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছেই সেটা শঙ্কার বিষয় হতে পারে।