ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার প্রয়াত হন। ৯২ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং, যিনি একসময় ভারতের অর্থনীতির উদারীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁকে শুনতে হয়েছিল নানা কটূক্তি। তারপরও মুখ থেকে বের হয়নি শ্লেষ। ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় সেসব কটূক্তি, নিন্দা ধেয়ে এসেছিল। তাই তো তিনি বলেছিলেন, ‘মিডিয়ার চেয়ে ইতিহাস আমার প্রতি সদয় হবে।’ আজ তিনি নেই তবে রয়ে গিয়েছে স্মরণীয় বক্তব্য এবং অতীত স্মৃতি।
সেই অতীত স্মৃতি ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মনমোহন সিং ২০০৪ সালের মে মাস থেকে ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বারাক ওবামা ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০২০ সালের স্মৃতিকথা দিয়ে লেখা বই—‘এ প্রমিজড ল্যান্ড’–এ বারাক ওবামা মনমোহন সিংকে ‘একজন অসাধারণ জ্ঞানের মানুষ’ হিসাবে। ভারতের অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রধান স্থপতি বলেও প্রশংসা করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্তে সেনাবাহিনীর যৌথ কুচকাওয়াজ বন্ধ, ফিরে যাচ্ছেন পর্যটকরা
বারাক ওবামা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ে নানা কথা তুলে ধরেছিলেন। ওই বইতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে এই অগ্রগতির একটি উপযুক্ত প্রতীক বলে মনে হয়েছিল। ক্ষুদ্র, প্রায়শই নির্যাতিত শিখ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একজন সদস্য যিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে উঠেছিলেন এবং একজন স্বমহিমার টেকনোক্র্যাট যিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। তবে তাদের আবেগকে আবেদন করে নয় বরং উচ্চতর জীবনযাত্রার মান এনে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত না হওয়ার জন্য একটি সুনাম বজায় রেখে।’
২০১০ সালে ভারত সফরের আগে বারাক ওবামা তখন মনমোহন সিংকে তাঁর ‘বন্ধু’ বলেছিলেন এবং ‘আমার দেখা সবচেয়ে অসাধারণ নেতাদের একজন।’২০০৯ সালে লন্ডনে জি–২০ সম্মেলনে ওবামা বলেছিলেন, ‘ভারতের বিকাশ ও উত্থানের কৃতিত্ব অনেকটাই মনমোহন সিংকে দেওয়া যেতে পারে। আশা করছি সামিট শেষ হওয়ার আগেই আমি তাঁকে বন্ধু বলে ডাকতে পারব।’ তারপর জি–২০ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে শুধু বারাক ওবামা এবং মনমোহন সিংকে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
মনমোহন সিং প্রয়াত হতেই সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ভারতে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়ে বারাক ওবামা টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, আপনি যদি তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, অ্যাঞ্জেলা মারকেল (জার্মানি), প্রধানমন্ত্রী (মনমোহন) সিং বা প্রেসিডেন্ট লি (দক্ষিণ কোরিয়া) বা প্রধানমন্ত্রী এরদোগান (তুরস্ক) বা ডেভিড ক্যামেরন (যুক্তরাজ্য) তাঁরা বলবেন যে প্রেসিডেন্টের (ওবামা) উপর আমাদের অনেক আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমি যে বন্ধুত্ব এবং বিশ্বাসের বন্ধন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম....কার্যকর কূটনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অংশ।’