আপনিও আপনার মোবাইল ফোন ছাড়া থাকতে পারেন না? ভয় করে যে আপনার মোবাইল ফোন হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে অথবা ব্যাটারি শেষ হয়ে যেতে পারে! যদি আপনিও এই ধরণের চিন্তাভাবনায় ঘেরা থাকেন, তাহলে আপনার একটু সতর্ক থাকা দরকার। আজকের সময়ে, আমাদের সকলের হাতে একটি স্মার্টফোন আছে যা এখন আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন যদি আমাদের ফোন হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয় অথবা ব্যাটারি ফুরিয়ে যায় তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? আপনি কি স্বাভাবিক থাকতে পারবেন! হয়তো এই চিন্তাই আপনাকে এখনই উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এটি এই ডিজিটাল যুগের নতুন সংকট যাকে বলা হয় 'নোমোফোবিয়া'।
নোমোফোবিয়া কী
নোমোফোবিয়ার পুরো নাম 'নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া'। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকার ভয়। এটি এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনের অভাবে নার্ভাস এবং উদ্বিগ্ন বোধ করেন। ২০০৮ সালে ব্রিটেনে এক গবেষণার সময় এই নামটি প্রথম উঠে আসে, যখন দেখা যায় যে মোবাইল ফোন ছাড়া মানুষ তাদের জীবন কল্পনাও করতে পারে না। সময়ের সাথে সাথে, আজ এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজকের ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কেবল কথা বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন একটি মাল্টি-টাস্কিং ডিভাইসে পরিণত হয়েছে যেখানে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাঙ্কিং, অনলাইন কেনাকাটা, স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং এমনকি আমাদের কাজও করি। যখন মানুষ এই পরিষেবাগুলি থেকে বঞ্চিত হয় তখন তারা চাপ এবং উদ্বেগ অনুভব করে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ছাড়া একদিনও কাটাতে পারে না।
নোমোফোবিয়ার লক্ষণগুলি কী কী
- ফোন নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ: ফোনের ব্যাটারি ফুরিয়ে গেলে বা নেটওয়ার্ক সিগন্যাল হারিয়ে গেলে আতঙ্কিত বোধ করা।
- ক্রমাগত আপনার স্মার্টফোন চেক করা: সারাদিন বারবার আপনার ফোন পরীক্ষা করা, কোনও নোটিফিকেশন এল কিনা।
- সময়ের অপচয়: ফোন ব্যবহারে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হয়, যার ফলে অন্যান্য কাজে মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
- সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি: বাস্তব জগতের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতে বেশি হারিয়ে যাওয়া।
- প্রিয়জনদের থেকে দূরত্ব: একাকীত্ব বা বিষণ্ণতার অবস্থায়, মোবাইল ফোনে আটকে থাকা এবং কাছের মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
নোমোফোবিয়ার প্রভাব
এই মানসিক অবস্থা কেবল ব্যক্তিত্বকেই প্রভাবিত করে না, বরং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রমাগত স্ক্রিন টাইম এবং মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, এটি সামাজিক সম্পর্কের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কারণ মানুষ বাস্তব জগতে যোগাযোগের পরিবর্তে তাঁদের ফোনে ব্যস্ত থাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে, এটি পড়াশোনা, কাজ, পারিবারিক সময় বা ব্যক্তিগত আগ্রহের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নোমোফোবিয়া এড়ানোর উপায়
- ডিজিটাল ডিটক্স গ্রহণ করুন: সপ্তাহে একদিন বা কয়েক ঘণ্টা আপনার ফোন থেকে দূরে থাকুন।
- সময়সীমা নির্ধারণ করুন: স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে দিনের বেলায় নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
- ফোনের সেটিংস পরিবর্তন করুন: নোটিফিকেশন এবং অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করে আপনার ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- ডিভাইস-মুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন: আপনার বাড়িতে কিছু নিয়ম সেট করুন। শোবার ঘরে বা ডাইনিং রুমে ফোন ব্যবহার বন্ধ করুন।
- ফোন থেকে বিরতি নিন: ছুটির দিন এবং বিরতি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য ফোন থেকে দূরে থাকুন যাতে আপনি মানসিক শান্তি পেতে পারেন।
- অফলাইন শখ বেছে নিন: পড়া, লেখা, ছবি আঁকা, সঙ্গীত ইত্যাদির মতো কার্যকলাপ বেছে নিন। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
- প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন: যদি সমস্যাটি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় তাহলে মনোবিজ্ঞানী বা পরামর্শদাতার সাহায্য নিন।