এই পৃথিবীতে শুধু মানুষ নয়, গোটা জীবজগতের জন্য সূর্যের আলো ভীষণভাবে উপকারী। চিকিৎসকরা সবসময় সারাদিনে কিছুটা সময় সূর্যালোকে থাকার পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয়, শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব মিটিয়ে দিতে পারে সূর্যালোক। কিন্তু যে সূর্যের আলো এতটা উপকারী, সেই সূর্যের আলো থেকে পালিয়ে বেড়ায় স্পেনের এক ১১ বছর বয়সী বালক।
১১ বছর বয়সী পোল ডোমিনগুয়েজের কাছে গ্রীষ্মকালীন ছুটির অর্থ হল শুধুমাত্র বাড়িতে বসে থাকা। যেখানে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অন্য বন্ধুরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে বিচে অথবা পার্কে সময় কাটায়, সেখানে এই শিশুটি সূর্যালোকের স্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য বাড়িতে গৃহবন্দী হয়ে থাকত।
(আরও পড়ুন: কীভাবে ২১ দিনে কমিয়েছিলেন ওজন? সেই গোপন কৌশল শেয়ার করলেন মাধবন)
স্পেনে বসবাসকারী এই ছেলেটি এমন একটি বিরল রোগে আক্রান্ত, যার ফলে সূর্যের আলো তার ত্বক এবং চোখকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এই বিরল রোগের নাম হল জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম। এটি হল এমন একটি বিরল জেনেটিক ব্যাধি, যা হলে আক্রান্ত ব্যক্তি সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকলেই তা মারাত্মকভাবে শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম ওরফে XP আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এমন একটি জেনেটিক মিউটেশন থাকে, যা অতি বেগুনি রশ্মির এক্সপোজারের কারণে শরীরের ইমিউন ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এই রোগটি একটি অটোসোমাল রিসেসিভ প্যাটার্নে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়।
XP আক্রান্ত ব্যক্তিরা সূর্যের আলো এড়িয়ে চলে কারণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শরীরে প্রবেশ করলেই এই রোগীদের শরীরে উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। রোদে থাকলে এই আক্রান্তদের শরীরে রোদে পোড়া, ফোসকা এবং ত্বকের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে শুধু সূর্যের আলো নয়, XP আক্রান্ত রোগীদের ত্বকের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, কৃত্রিম আলোর সংস্পর্শে এলেও।
(আরও পড়ুন: প্রকাশিত হলো বিশ্বের ১০০টি সেরা খাবারের তালিকা, স্থান পেল ভারতের একটি পদও)
ত্বক পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রোদের সংস্পর্শে এলে এই ব্যক্তিদের শরীরে পিগমেন্টেশনের অনিয়মিত প্যাচ তৈরি হয়, যেগুলি সময়ের সাথে সাথে হালকা হয়ে যায়। কিন্তু ক্রমাগত যদি ত্বকের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে রোগীদের অল্প বয়সে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।
XP আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য সব সময় ফুলহাতা জামাকাপড়, মাথায় টুপি এবং চোখে সানগ্লাস পড়তে হবে। দিনের বেশিরভাগ কাজ রাতের অন্ধকারে সেরে নিতে হবে, যাতে সূর্যালোকের সংস্পর্শে বেশি না যেতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন রুটিন গুলিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের।