কলকাতার নদী ঘাটগুলির দৈনন্দিন কর্মী—হকার, নাপিত ও ঝাড়ুদারদের নিয়ে শুরু হয়েছে 'রিভার অ্যাম্বাস্যাডর' প্রকল্প। এক বেসরকারি সংস্থার এই উদ্যোগের মাধ্যমে তাঁরা ঘাটের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং জীবনরক্ষার কাজে অংশ নেবেন।
ইটিভি ভারত সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নদীর ঘাটে এই কর্মীরা চা, ঝালমুড়ি বিক্রি, সাফাই বা ক্ষৌরকর্ম করে থাকেন। ঘাটের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁরা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ এবং ধারাবাহিক পরিবর্তনের সাক্ষীও বটে। আহিরিটোলা ঘাট থেকে বাগবাজার মায়ের ঘাট পর্যন্ত তাই বিভিন্ন ঘাটে তাঁদের 'রিভার অ্যাম্বাস্যাডর' হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে, তাঁদের ঘাটের শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করা এবং ঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার উপায়ও শেখানো হচ্ছে। সাঁতার জানা কর্মীদের ডুবন্ত মানুষের জীবনরক্ষার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
নদীতীরে আসা অনেক মানুষই সাঁতার না জানায় জোয়ারের জলে ভেসে যান, অনেকে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেন। তাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই হকারদের দেওয়া হচ্ছে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। মঙ্গলবার চাঁপাতলা ঘাটে ১৬ জন চা বিক্রেতা ও নাপিত এই কর্মশালায় অংশ নেন। তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণকালীন সময়ে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে, যা পেয়ে তাঁরা যারপরনাই খুশি।
আরও পড়ুন - কাগজের কিউআর কোড নির্ভর টিকিটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা, কলকাতা মেট্রোয় সমস্যা
উদ্যোগী সংস্থার কর্ণধার লাইলি থম্পসন জানান, ‘চাঁপাতলা ঘাট থেকে এই পাইলট প্রজেক্ট শুরু হল। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০০ জন হকারকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এই ঘাটগুলি ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাক। এজন্য পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
এই প্রকল্পে সি এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউট ও লিভিং ওয়াটার মিউজিয়ামের কলকাতা চ্যাপ্টার যুক্ত হয়েছে। সি এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউটের সম্পাদক নীলেন্দ্র সরকার বলেন, ‘গত বছর হুগলি নদীতে ১৭৪ জন ডুবে মারা গিয়েছেন। সাঁতার জানা কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই সংখ্যা কমানো সম্ভব।’
লিভিং ওয়াটার মিউজিয়ামের সদস্য সুকৃত সেন জানান, ‘এই হকাররা দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছেন, সেটাও একটা ইতিহাস। আগামী দিনে আহিরিটোলা ঘাট, রথঘাট, মল্লিক ঘাট, চাঁপাতলা ঘাট, কুমোরটুলি ঘাট নিয়ে ইন্টার-অ্যাকটিভ মিউজিয়াম ও বড় আকারে রিভার ফেস্টিভ্যাল করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন - শিবপুর থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ, মামলা কলকাতা হাইকোর্টে, চাপে যাত্রীরা
চা বিক্রেতা প্রদীপ দাস, যিনি ৩০ বছর ধরে এই ঘাটে কাজ করছেন, জানান, ‘ঘাটের চরিত্র কীভাবে বদলে যায়, তা আমি চোখের সামনে দেখেছি। এই উদ্যোগে আমরা খুশি।’
কলেজ পড়ুয়া সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। হকারদের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে আমরা তাঁদের চিনতে পারব এবং ঘাটের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারব।’
এই অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে ঘাটের পরিচ্ছন্নতা, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং জীবনরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।