আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির প্রয়োজন হয়। যদিও প্রত্যেক করদাতার আয় এবং আর্থিক লেনদেনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন নথির প্রয়োজন হতে পারে, তবে কিছু নথি রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষেরই প্রয়োজন হয়। অতএব, ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করার সময় এই ধরনের সমস্যা এড়াতে, প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা জরুরি।
আইটিআর ফাইল করার জন্য প্রয়োজনীয় নথির তালিকা
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আইটিআর ফাইল করার জন্য আপনার যে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলির প্রয়োজন হবে তার তালিকা এখানে:
- প্যান কার্ড: প্রথমে আসে প্যান কার্ড (স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর), যা আইটিআর ফাইল করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি টিডিএসর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং মনে রাখবেন যে সরাসরি আয়কর ফেরতের জন্য এটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করে রাখতে হবে। এবার যদি কোনও কারণে প্যান কার্ড খুঁজে না পান, তাহলে আধার নম্বর ব্যবহার করে আইটিআর ফাইল করতে পারেন।
- আধার কার্ড: আয়কর আইনের ধারা ১৩৯AA অনুসারে, রিটার্ন দাখিল করার সময় নিজের আধারের বিবরণ প্রদান করতে হবে। এবার যদি আধারের জন্য আবেদন করেও না পেয়ে থাকেন, তাহলে নিজের আইটিআর-এ এনরোলমেন্ট আইডি ব্যবহার করতে পারেন। প্যান এবং আধার লিঙ্ক করলে ওটিপি-এর মাধ্যমে আপনার আইটিএর অনলাইনে যাচাই করা সম্ভব হবে।
- ফর্ম ১৬: এই নথিটি করদাতার নিয়োগকর্তা অর্থাৎ কোম্পানি জারি করে থাকে এবং এতে আপনার বেতন এবং টিডিএস (উৎসে কর কর্তন) এর বিবরণ থাকে। এটি বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। ফর্ম ১৬-এর দুটি অংশ রয়েছে: অংশ এ/A-তে কোম্পানি কর্তৃক কেটে নেওয়া করের বিবরণ থাকে এবং অংশ বি-তে বেতন ব্রেকআপের মতো টিডিএস গণনা করা থাকে।
- ফর্ম-১৬এ/ ফর্ম-১৬বি/ ফর্ম-১৬সি: বেতন বাদে অন্যান্য আয়ের উপর কাটা টিডিএসের জন্য এই ফর্মগুলি প্রয়োজন। ফর্ম ১৬এ ব্যাঙ্ক বা অর্থ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জারি করে থাকে, যেখানে ফর্ম ১৬বি সম্পত্তি লেনদেনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ফর্ম ১৬সি ভাড়া আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ: আপনার আইটিআর-এ সমস্ত সক্রিয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তথ্য প্রকাশ করতে হবে, পাশাপাশি ট্যাক্স রিফান্ড কোন অ্যাকাউন্টে আসবে, সেই অ্যাকাউন্ট নির্দিষ্ট করতে হবে। সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিটের উপর পাওয়া সুদের কথা জানাতে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা পাসবুক প্রয়োজন।
- ফর্ম ২৬এএস: ফর্ম ২৬এএস-এ সমগ্র আর্থিক বছরের আপনার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের বিবরণ রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাঙ্ক, নিয়োগকর্তা বা অন্যান্য সংস্থার টিডিএস বিবরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্যাক্স ক্রেডিট দাবি করার জন্য, আপনার রিটার্নে পূরণ করা তথ্য ফর্ম ২৬এএস-এ দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলতে হবে। যদি উভয়ের মধ্যে কোনও পার্থক্য পাওয়া যায়, তাহলে আয়কর বিভাগ আপনার কাছে এর স্পষ্টীকরণ চাইতে পারে।
- হোমলোন স্টেটমেন্ট: যদি আপনি আপনার হোমলোনের সুদের উপর কর ছাড় দাবি করতে চান, তাহলে হোমলোনের সুদের সার্টিফিকেটটি সঙ্গে প্রস্তুত রাখুন, কারণ আইটিআর দাখিল করার সময় এটি প্রয়োজন হবে। আপনি যদি হোমলোন নিয়ে থাকেন তাহলে সহজেই ব্যাঙ্ক থেকে এই স্টেটমেন্ট পেতে পারেন।
- কর সাশ্রয়ী উপকরণ: বিনিয়োগ সম্পর্কিত কর-সাশ্রয়ী নথিপত্র যেমন ফিক্সড ডিপোজিট সংক্রান্ত নথি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রস্তুত রাখুন, বিশেষ করে যদি আপনি ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দাবি করতে চান, তাহলে এটি অত্যন্ত জরুরি।
- মূলধন লাভের বিবরণ: যদি আপনি শেয়ার বা সম্পত্তির মতো কোনও কিছু বিক্রি করে থাকেন, তাহলে মূলধন লাভ বা লোকসানের রিপোর্ট করার জন্য ব্রোকারের স্টেটমেন্ট লাগবে।
- ভাড়ার আয়: আপনি যদি কিছু ভাড়া দিয়ে থাকেন, আপনার আইটিআর-এ সম্পত্তি থেকে ভাড়ার আয়ও জানাতে হবে।
- বৈদেশিক আয়: আপনি যদি অন্য দেশে অর্থ উপার্জন করেন, তাহলে আপনাকে সেখানে কর দিতে হতে পারে। কিন্তু চিন্তা করবেন না! ডবল ট্যাক্সেশন এভয়ডেন্স এগ্রিমেন্টের অধীনে আপনি আপনার দেশে কর সুবিধা পেতে পারেন। এই সুবিধা পেতে, আপনাকে বিদেশে অর্জিত আয় এবং সেই দেশে প্রদত্ত কর প্রমাণ দেখাতে হবে। এইভাবে, আপনাকে একই আয়ের উপর দুইবার কর দিতে হবে না - একবার বিদেশে এবং আবার নিজের দেশে।
- লভ্যাংশ আয়: রিটার্ন দাখিলের সময় শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ থেকে লভ্যাংশ আয় দেখাতে হবে। এর জন্য, ব্রোকার স্টেটমেন্ট বা ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সারাংশ থেকে বিশদ বিবরণ বের করতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য আইটিআর দাখিলের শেষ তারিখ ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই। আপনার রিটার্ন দাখিল করার সময় এই সমস্ত নথিপত্র সঙ্গে রেখে আপনি আপনার ট্যাক্স ফাইলিং প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করতে পারেন। এই সমস্ত নথিপত্র নিরাপদে রাখুন যাতে প্রয়োজনে পরে কর পরামর্শদাতা বা আয়কর বিভাগকে দেখানো যায়।