শীতকালের সকালে হোক বা ব্যস্ততম কাজের দুপুরে, কফি খেলে এক ঝটকায় সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। প্রতিদিন মানুষের মধ্যে কফি খাওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশন অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০ বিলিয়ান কিলোগ্রাম কফি পান করা হয়। সারা বিশ্বে মূল্যবান পণ্যের নিরিখে কফির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পেট্রোলিয়ামের পর।
সারা বিশ্বে দৈনিক ২.২৫ বিলিয়ন কাপ কফি পান করা হয় এবং প্রতিবছর ৮১৫ বিলিয়ন কাপ কফি পান করা হয়। বিশ্বের ৩০ শতাংশ কফি খায় ফিনল্যান্ডের মানুষ, তারপরেই রয়েছে উত্তর আমেরিকার স্থান। আমেরিকার মানুষ প্রতিদিন ৪০০ মিলিয়ন কাপ কফি পান করেন। এশিয়ায় ভারতীয় কফির চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে পশ্চিমঘাট এবং পূর্বঘাট পর্বতের পাদদেশে কফি চাষের প্রবণতা বাড়ছে।
কফিকে শুধুমাত্র একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করলে হবে না। কফি হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর ‘পাওয়ার হাউস’ যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং আপনার স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কফিতে থাকে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং ক্যাফিন। কফি খেলে বিজ্ঞানসম্মত ৬টি উপকারিতা পাওয়া যায় যার ফলে কফির চাহিদা উত্তরোত্তর এত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(আরও পড়ুন: পুজোয় নিরামিষ প্রিয় বন্ধুকে আপ্যায়ন করুন ‘গাছপাঁঠা’ কাটলেট দিয়ে, রইল রেসিপি)
কফি খাওয়ার উপকারিতা:
মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস: ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, যারা নিয়মিত কফি খান তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি কমে যায়। কফিতে থাকা উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
কার্ডিও ভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি: কফির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর পরিমান গ্রিনটিকেও ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ কফি যারা পান করেন, তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বেশি কমে যায়।
টাইপ টু ডায়াবেটিস: ক্যাফাইন যুক্ত বা ডি ক্যাফিনেটেড যুক্ত কফি পান করলে ডাইবিটিসের সমস্যাও কমে যায়। প্রতিদিন দৈনিক এক কাপ কফি মধুমেয় রোগের সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে ৭ শতাংশ।
লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন কফি খেলে ফ্যাটি লিভার, লিভার ফাইব্রোসিস, লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। ভারতে যেহেতু লিভার সম্পর্কিত রোগের প্রবণতা অনেক বেশি তাই কফি খেলে এই সমস্যা থেকে বেশ অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়।
(আরও পড়ুন: আর ১০ দিন পরেই মহালয়া, প্রিয়জনকে জানান শারদীয়ার শুভেচ্ছাবার্তা)
বিষন্নতার ঝুঁকি হ্রাস: নিয়মিত কফি খেলে বিষন্নতা বা অ্যালজাইমার রোগের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বয়স্ক জনসংখ্যার হার দিনের পর দিন দ্রুত বাড়ছে ভারতবর্ষে, সেক্ষেত্রে কফি পান করলে বয়স্কদের মধ্যে অ্যালজাইমার হওয়ার ঝুঁকি ৬৫ শতাংশ কমে যায়।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: কফির প্রাথমিক সক্রিয় উপাদান ক্যাফাইন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন কফি খেলে মেজাজ উন্নত হয় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
প্রসঙ্গত, কফি খাওয়া উপকারী হলেও চিনি দিয়ে কফি খাওয়া একেবারেই উপকারী নয়। সকালে বা বিকেলে কফি খাওয়ার চেষ্টা করবেন, রাতে কফি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। প্রতিদিন ১ বা ২ কাপের বেশি কফি খাওয়া একেবারেই ভালো নয়। অতিরিক্ত কফি খেলে স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে।