আজ খাতায় কলমে প্রেমের উৎসব। ভালবাসা উদযাপনের দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে সব প্রেমিক-প্রেমিকাই চায় তাদের ভালবাসাকে উদযাপন করতে। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ঋদ্ধি সেন অবশ্য ভালোবাসার জন্য স্রেফ একটি বিশেষ দিন পালিত হবে, এই ব্যাপারটাতেই বিশ্বাসী নন। ঠিক যেমন ভালোবাসা ও সেই বিশেষ মানুষটিকে নিয়েও দৃপ্ত ভঙ্গিতে স্ট্রেট ব্যাটে কথা বলতে ভালোবাসেন তিনি। টলিপাড়ার নয়া প্রজন্মের এই অন্যতম চর্চিত ও জনপ্রিয় মুখ একান্ত সাক্ষাৎকারে ভালোবাসা নিয়ে তাঁর অভিমত, নানান অজানা কথা এবং টুকরো টুকরো হাসি ভাগ করে নিলেন হিন্দুস্তান টাইমস-এর সঙ্গে।
সুরাঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আপনার প্রেম তো প্রাচীন অরণ্যের প্রবাদে জায়গা করে নিয়েছে?
(জোরে হাসি) থ্যাঙ্ক য়ু, থ্যাঙ্ক য়ু। সাত বছরে পড়ল আমাদের সম্পর্ক।
'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এর 'ফোয়ারা' তো এখন অনেকটাই বড়। তা ভালোবাসার সংজ্ঞা এখন তাঁর কাছে ঠিক কী?
দেখুন, সত্যি কথা বলতে কী ভালোবাসা নিয়ে ভারি, ভারি কথা বলব সে বয়স আমার হয়নি। তবে হ্যাঁ, নিজস্ব উপলব্ধি ও বোধ দিয়ে বুঝেছি 'ভালোবাসা' ব্যাপারটির সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনও ট্যাগ না ঝুলিয়ে দিলেই ভালো। বলতে চাইছি, নিখাদ বন্ধুত্ব এবং বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অসম্ভব। ভালোবাসা তো সেটাই যেখানে নিজেকে নিঃসঙ্কোচে, নির্ভয়ে প্রকাশ করা যায়। আমার এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা বলার আছে।
বলুন না!
দেখুন, আমরা অনেকেই হয়ত খেয়াল করি না যে ভালোবাসার মানুষ দু'টি যতই পরস্পরকে ভালোবাসি না কেন, দিনের শেষে তাঁরা কিন্তু দু'জন আলাদা মানুষ। তাই পরস্পরের সেই স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো উচিত ও তা মেনে নেওয়া উচিত। এই ব্যাপারটি যদি আমরা প্রথম থেকেই স্বীকার করে ফেলি, তাহলে একসঙ্গে পথ চলাটা খানিকটা হলেও সহজ ও সুন্দর হয়।

সুরঙ্গনা ও ঋদ্ধির জমাট সম্পর্কের সিক্রেট রেসিপিটি ঠিক কী?
(হেসে) এই রে! উমম...এখানে একটি নয় বরং কয়েকটি ব্যাপার রয়েছে। সুরঙ্গনা ও আমার মধ্যে কোনও কিছু লুকোছাপা নেই। ও আমার সবথেকে ভালো বন্ধু। আমার ২৪ বছরের জীবনে ওঁর মতো এতটা কাছের বন্ধু আর কেউ হয়ে ওঠেনি।
এটা কিন্তু আপনার বাকি বন্ধুরা দেখবেন এবং পড়বেন।
(হাসি) নিশ্চয়ই! আমি আবার জোর দিয়ে এই কথাটা ফের বলব। ঋতব্রত (মুখোপাধ্যায়)-ও আমার খুব কাছের, আমার মা-বাবাও তো বন্ধুর মতোই মেশেন। তবে সুরঙ্গনার মতো এত ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় বন্ধুত্ব আর কারও সঙ্গেই নেই আমার। আসলে কী জানেন, বেশ ছোট থেকেই তো সুরঙ্গনা আর আমার সম্পর্ক, তো পরস্পরের দুর্বলতা থেকে ভয় কেটে ওঠার রাস্তায় আমরা একসঙ্গে হেঁটেছি। কখনও ও আমার হাত ধরেছে, কখনও আমি ওঁর হাত শক্ত ধরে সেই রাস্তাগুলো পেরিয়ে এসেছি। এবং ওই যেটা বললাম আমাদের দু'জনের প্রতি দু'জনের অগাধ সম্মান। আরও একটি ব্যাপার রয়েছে, শিল্প এবং মিউজিক। ও তো অসম্ভব সুন্দর গান গায়, আমি সেসব না পারলেও গিটারের সঙ্গে আমার বন্ধনটা বেশ নিবিড়। তাই সঙ্গত করে যেতে পারি। দু'জনেই শিল্প জগতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার ফলে সুর ও শিল্পের কোথাও একটা যোগসাজশ হয়েছে। এটুকুই...
আচ্ছা, ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে বিশেষ কোনও স্মৃতি?
দেখুন, সত্যি কথা বলতে কী আমার কাছে এই দিনটির যা দারুণ গুরুত্ব এমনটি নয়। প্রতিদিনই তো ভালোবাসার মানুষের জন্য, তাঁর সঙ্গে উদযাপন করার দিন। তবে একেবারে যে এই দিনটির অভিজ্ঞতার ঝুলি শুকনো সেটাও না। একটি ঘটনা বলি। তখন 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এর শ্যুটিং শেষ হয়েছে। ভ্যালেন্টাইনস ডে সামনেই। সুরঙ্গনাকে হাতে লেখা একটি চিঠি দিয়েছিলাম। ঠারেঠোরে প্রেম নিবেদন-ই করেছিলাম (লাজুক হাসি।) সোজা কোথায়, প্রেম প্রস্তাব। দিয়ে অবশ্য টেনশন শুরু হয়েছিল। এই বুঝি আমার সঙ্গে কথা বলা বিলকুল বন্ধ করে দেবে, সঙ্গে হয়ত সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করে দেবে। অবশ্য কোনওটি হয়নি। আমার চিঠিটা পেয়ে জবাবে সে বলেছিল, 'till now I was floating , now I’m shooting up the earth’s atmosphere.'
আর আপনি তখন....
ওরে বাবা! প্রচন্ড খুশি যাকে বলে(জোরে হাসি)। মনে মনে মহাকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি তখন।
ভালোবাসার মানুষের থেকে এখনও পর্যন্ত পাওয়া সেরা তারিফ?
এই রে, মুশকিলে ফেললেন। ওঁর থেকে প্রশংসা পেলেই তো দারুণ ভালো লাগে। তবে এই কিছুদিন আগেই ওঁর থেকে পাওয়া একটি কমপ্লিমেন্ট পেয়ে ভারি মজা লেগেছে। আনন্দ তো হয়েইছে। সেটা বলি। আমার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খাপ খায় এমন তিনটি রঙ দিয়ে আমাকে ব্যাখ্যা করেছে সুরঙ্গনা। প্রথমে তুলনা করা হল নীল রঙের সঙ্গের সঙ্গে কারণ ওঁর মতে আমি নাকি বেশ সেরিব্রাল। এরপর ওঁর মতে আমি বেশ 'টাফ', তাই দ্বিতীয় রঙ পেলাম কালো। আবার শেষে আমাকে বলা হল, আমার মধ্যে নাকি অদ্ভুত একটা সারল্য রয়েছে তাই বেবি পিঙ্ক রঙটাও দারুণ মানানসই আমার সঙ্গে (হাসি)। গোটা বিষয়টাই একইসঙ্গে বেশ মজার ও ভারি ইন্টারেস্টিং লেগেছিল আমার।
তা পর্দায় এই জুটিকে ফের কবে দর্শক দেখতে পাবেন?
আজকেই দেখতে পাবেন। অনুপম রায়ের নতুন গানের ভিডিয়ো 'পুতুল আমি'-তে আমি আর সুরঞ্জনা অভিনয় করেছি। এছাড়া রয়েছে ইন্দ্রদীপ সেনগুপ্তর পরিচালনায় 'বিসমিল্লাহ'। আমরা দু'জন ছাড়াও এই ছবিতে রয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শুভশ্রী। চলতি বছরেই বড়পর্দায় মুক্তি পাবে এই ছবি।