ভারতে ফিরল না তবলাবাদক জাকির হুসেনের মরদেহ। মার্কিন মুলুকেই গোরস্থ করা হল তবলা-সম্রাটকে। গত সোমবার ভোরে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন জাকির আল্লা রাখা কুরেশি, যাঁকে গোটা বিশ্ব চিনেছে জাকির হুসেন নামে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। জাকির হুসেন তবলায় হাত রাখলে দোলা লাগত হাজার হাজার ভক্তের হৃদয়ে। তিনি ‘একম এবং অদ্বিতীয়ম’। আরও পড়ুন-‘ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন’, জাকিরের প্রয়াণে শোকাহত মোদী-মমতা
সান ফ্রান্সিসকোতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তবলাবাদক। সান ফ্রান্সিসকোর ফার্নউড কবরস্থানে বৃহস্পতিবার (মার্কিন সময়ানুসারে) পরিবার ও প্রিয়জনদের উপস্থিতিতেই দাফন করা হয় জাকির হুসনকে। শেষকৃত্যেও তাঁর সঙ্গে থাকল সঙ্গীত। জাকির হুসনের শেষযাত্রায় ড্রাম বাজালেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু, তথা বাদ্যকার শিবমণি।
ফুসফুসের রোগ ইডিওপ্যাথিক পালমোনারি ফাইব্রোসিসে ভুগছিলেন উস্তাদ জাকির হুসেন। সেই সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ৭৩ বছর বয়সেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বিশ্বের অন্যতম সেরা বাদ্যকর।
নিজের গুরু তথা বড় ভাই জাকির হুসেনের শেষযাত্রায় চোখে জল শিবমণির। ভিডিয়ো শেয়ার করে তিনি বলেন, জাকির হুসেন চলে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর আর্শীবাদ বিশ্বের সব বাদ্যকরের সঙ্গে রয়েছে। এবং জাকির হুসেনের উত্তরাধিকারকে তাঁর ধরে রাখতে হবে। কথা বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে শিবমণির। ফ্যানেদের মন ভার প্রিয় শিল্পীর চোখে জল দেখে।
কিংবদন্তি তবলা বাদক আল্লা রাখার পুত্র জাকির হুসেন। জ্ঞান হওয়ার আগেই তবলার তাল শিখে নিয়েছিলেন। এরপর এই বাদ্যযন্ত্রে তিনি বিপ্লব ঘটিয়েছেন, এটিকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সীমা ছাড়িয়ে জ্যাজ এবং পশ্চিমা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে রচেছেন ইতিহাস।
ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের অন্যতম সুপরিচিত এই সংগীতশিল্পী ছয় দশকের ক্যারিয়ারে চারটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন, যার মধ্যে তিনটি পেয়েছেন এই বছরের গোড়ায় ৬৬তম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে। গ্র্যামির বাইরেও সংগীতশিল্পী পেয়েছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ভারত সরকারের তরফে দেশের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ নাগরিক সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০২৩ সালে পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন জাকির হুসেন।
হুসেন তাঁর স্ত্রী অ্যান্টোনিয়া মিনেকোলা, কন্যা আনিসা কুরেশি এবং ইসাবেলা কুরেশি, তাঁর ভাই তৌফিক কুরেশি এবং ফজল কুরেশি এবং তাঁর বোন খুরশিদ আউলিয়া রেখে গেছেন। শিল্পী জাকির হুসেন না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর অবিনশ্বর। উস্তাদজির প্রয়াণে মন ভারাক্রান্ত গোটা দেশের।