করোনাকালে বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়কে হারান স্বস্তিকা। মা আগেই ইহলোকের মায়া কাটিয়েছিলেন, বাবার মৃত্যুতে একা হয়ে যান স্বস্তিকা। বিয়ে টেকেনি, বাবা-মা'র সমর্থনেই একা মায়ের লড়াই লড়েছেন স্বস্তিকা। ইন্ডাস্ট্রিতে আড়াই দশক কাটিয়েও আজও তাঁর ঠিকানা বাবার বাড়ি। দেখনদারিতে বারবারের অনীহা অভিনেত্রীর।
পুজোর আবহে টেক্কার প্রচারে ব্যস্ত, একইসঙ্গে প্রতিবাদেও রয়েছেন অভিনেত্রী। ঘরোয়া আয়োজনে বাড়িতে দুর্গাপুজো করেন স্বস্তিকা। কিন্তু এই বছর তাঁর মন ভালো নেই। তবুও মায়ের পুজো তো বন্ধ থাকবে না। সবকিছুর মাঝেও বড্ড মন খারাপ তাঁর। এদিন লম্বা ফেসবুক পোস্টে সেই মন কেমনের কথা তুলে ধরলেন, উঠে এল বাবাকে হারানো মেয়ের যন্ত্রণা।
তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'কাল রাতে ঘুম টা হঠাৎ ভেঙে গেলো। সেই চেনা গন্ধটা নাকে আসতেই উঠে পড়লাম। গন্ধটা পেয়ে জেগে গেছিলাম, নাকি জেগে গিয়ে গন্ধটা পেলাম ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। বাবা ষ্টুডিও থেকে বাড়ি ফিরলেই বাড়িটা যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠত, কাল রাতে ঠিক তেমনটা হলো। আর সেই ঘাম, পারফিউম, ইউ ডি কোলন মেশানো গন্ধটা বাড়িময় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
আমি বালিশে মাথা রেখেই ভাবছি, আচ্ছা বাবা কী সত্যি বাড়ি ফিরেছে? মাসিকে ডেকে বলল, কিরে মামণি মাটিটা কেমন বালি বালি হয়ে আছে, সন্ধেবেলা ঠিক করে মুছিস নি? বাড়িতে ঘট বসে গেছে, আবার ঝাঁট দিসনি তো? মাসি কী বলল সেটা শুনতে পেলাম না। তারপরই বাথরুম এ ঢুকলো বাবা, রোজ যেমন যেত পা ধুতে। জল পড়ার আওয়াজ ও পেলাম। ফুলকি পায়ে পায়ে ঘুরছিল বলে আবার ফুলকি কেও স্বভাববশত কত কিছু বলল। এমনিতে ফুলকি গলা দিয়ে নানান স্বর বের করে আদুরে ভাসায় কথা বলে, কিন্তু কাল রাতে বলল না, বা বলেছে হয়তো আমি শুনতে পেলাম না। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে বাবার গলা টাই শুনছিলাম। গাঢ় গেরুয়া রং এর পাঞ্জাবিটা পরে ছিল বাবা।'
স্বপ্নের সাগরে ভেসে অভিনেত্রী আরও লেখেন, 'বাথরুম থেকে বেরিয়ে, দাঁড়া একটু বসতে দে, মামণি আমার বড় গ্লাস টায় জল দে তো, বলে নিজের ঘর এ চলে গেলো। আমি সেই একই ভাবে ডান পাশ ফিরে বালিশে মাথা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছি, আমি কখন বাড়ি ফিরেছি জিজ্ঞেস করল না তো? তাহলে কী ভুলে গেলো যে আমি বাড়িতেই আছি ? কত কিছু ভাবলাম, ওই চেনা গন্ধটা নাকে নিয়েই, কিন্তু ডান পাশ থেকে আর বা পাশে ফেরা হলো না।
বাড়িতে পুজো, সকাল সকাল উঠে পড়েছি, তখনও গন্ধটা নাকে লেগে আছে।আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম না, আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমি চেয়ে ছিলাম। খালি কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে পাশ ফিরিনি, উঠেও যায়নি। ঘরের দরজা খোলা ছিল, তাকালেই বাবা কে দেখতে পেতাম কিন্তু তাকালাম না। অথচ পাঞ্জাবির রং টা তো ঠিক মনে আছে। দিন গড়িয়ে সন্ধে নামার আগে ছাদ এ উঠে খুব মন দিয়ে ভাবলাম। রাত হতে চলল এখনও ভাবছি, একবার ঘুরে তাকালেই বাবা কে দেখতে পেতাম, কত বছর দেখিনি, তাকালাম না কেন? উঠে গেলাম না কেন?'
স্বপ্ন আর সত্যির মায়াজালে আছন্ন হয়ে রয়েছেন স্বস্তিকা। মনে মনে তাঁর প্রশ্ন, ‘স্বপ্ন হলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অব্দি বাবার গায়ের গন্ধটা পেতাম?’ অথচ সাহস করে মাসিকে একটা কথা ও জিজ্ঞেস করতে পারেননি। তিনি লেখেন, ‘যদি মাসি বলে না কেউ আসেনি তো…কি জানি, পুজোর কটা দিন আমার কাছে থাকবে বলে বাড়ি ফিরল হয়তো…আবার যদি আসে, আমি যদি আবার দেখতে না পাই, যদি ডাকে শুনতে না পাই, এই ভয়ে ঘুমোতে পারি না। কত ওষুধ খাই তাও পারি না। যদি বাবা আসে, যদি ডাকে, আমি ভুলে গেছি আর অপেক্ষা করিনা ভেবে যদি সাড়া না পেয়ে চলে যায়ে ?! আর তো দেখতে পাব না।’
সব শেষে স্বস্তিকার একটাই প্রার্থণা, পৃথিবীর সব বাবারা ভালো থাকুক, তাঁর সন্তানেরা তাঁদের আগলে রাখুক কারণ ‘চলে গেলে সব শেষ’।