এবারে তিলোত্তমা এক অন্যরকম উৎসবের মুখোমুখি হয়েছে। একদিকে যেমন হাজার হাজার লোকের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসত ছিল না পুজো মণ্ডপগুলিতে, তেমনই আবার ধর্মতলায় অনশনে বসেছিল জুনিয়র ডাক্তাররা। একাংশ, ঠাকুর দেখার বদলে, আরজি কর নির্যাতিতার হয়ে বিচার চাইতে সেখানেই জমায়েত করেছিল। এমনকী, কার্নিালের দিনও একদিকে উৎসব, আরেকদিকে দ্রোহ দেখেছে কলকাতাবাসী। এরকম দৃশ্য যে শহরে হতে পারে, তা হয়তো ভাবনার বাইরে ছিল সাধারণ মানুষের।তবে শুধু যে শহর কলকাতার মানুষ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনরে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তা বললে ভুল হবে। ধর্মতলায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, দূরদুরান্তের মানুষ এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের পাশে। সেরকমই একটি পোস্ট নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন ডাক্তার-অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ।যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক ঢাকি তাঁর অর্জিত অর্থ থেকে কিছু টাকা তুলে দিয়েছেন এক পরিচিতর হাতে। এক বুক আশা নিয়ে, যাতে তা আন্দোলনরত ডাক্তারদের হাতে পৌঁছে যায়। অনুপ ঘোষাল নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাসানের পরদিন ঢাকিরা সারা পাড়া ঘুরে বেড়ায়। সবাই কিছু না কিছু দেয়। ওরা বলে পথের খরচ। সম্ভবত আড্ডা থেকেই ফিরছিলাম। ও আমায় দেখে, দাদা একটু শুনবা বলে রাস্তার পাশে ডেকে নিল। মুখে হাসি। ঢাকটা থাকল কাঁধেই। বুক পকেট থেকে ছবির এই জিনিসটা বের করে আমার হাতে দিল। বললাম, টাকা কেন? কী হবে?’সেই ঢাকি এরপর জানান, তিনি পথ খরচের ভাগে তিনশ আঠারো টাকা পেয়েছেন। কিন্তু অত টাকা লাগবে না তাঁর। একশো দশ টাকা খরচ লাগবে বাড়ি ফিরতে। বাদবাকিটা তিনি তুলে দেন সেই অনুপ ঘোষালের হাতেই। সেই ঢাকির বক্তব্য ছিল, ‘অতো লাগবি নি। একশো দশ হলিই হবে। বাকিটা এর মধ্যি আছে, ডাক্তারবাবুদের হাতে দিতি পারবেন? জানি এ কিছু না, তবু ...’তিনি ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘ওটা ওভাবেই রেখেছি। জানি না কীভাবে, কার কাছে দেব। অনশন মঞ্চের সামনে বড্ড ভিড় থাকে। কারো অ্যাকাউন্টে গুগল পে বা সেরকম কিছু করতে চাইছি না। চাইছি ওঁর ওই স্পর্শটা ডাক্তারবাবুরা অনুভব করুক। ওটা যতবার ছুঁয়েছি ততবার এই আকালেও নিজেকে বলেছি, প্রাণ আছে এখনও প্রাণ আছে! এত এত ভালো মানুষের সাথে আমার পরিচয় হয়ে যাওয়াটা ঋণ বাড়িয়ে দেয় শুধু। ওঁদের মতো ভালো হওয়ার লোভ হয়।’ এই পোস্ট নিজের ফেসবুকে শেয়ার করলেন কিঞ্জল নন্দ। তিনি লিখলেন, ‘আমি জানি,আপনার মতো মানুষকে প্রণাম করার যোগ্য ও আমি নই,তবুও প্রণাম আপনাকে,শক্তি দিন, ঠিক এইরকম নির্লোভ জীবন গড়ে তোলার’। সেই ঢাকির নাম বা পরিচয় সামনে আনেননি অনুপ ঘোষাল। তবে অজানা-অচেনা মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে চোখে জল এসেছে সাধারণ মানুষেরও।