এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের অন্যতম চর্চিত নায়িকা তিনি। জি বাংলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ‘জগদ্ধাত্রী’ এবং ‘জ্যাজ স্যানাল’ রূপে। কেরিয়ারের একদম গোড়াতেই বাজিমাত করেছেন অঙ্কিতা মল্লিক। তবে টেলিপাড়ায় ওতো সহজে ভাগ্যের শিকে ছেড়েনি অঙ্কিতার। সহ্য করেছেন ‘রিজেকশন’ও। অঙ্কিতার জগদ্ধাত্রী হয়ে ওঠবার সফর থেকে সদ্য অনুষ্ঠিত সোনার সংসারে দুর্দান্ত সাফল্যে-- আমাদের প্রতিনিধি প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন অঙ্কিতা (Ankita Mullick)
সোনার সংসারের দু'টো পুরস্কার জগদ্ধাত্রীর জন্য, সোনায় মোড়া অভিনন্দন আপনাকে! কেমন অনুভূতি?
অঙ্কিতা: খুব ভালো লাগছে। আমার প্রথম সোনার সংসার, সবটাই আমার কাছে নতুন, অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হল। তার উপর এই দুর্দান্ত জয়, আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অঙ্কিতার জগদ্ধাত্রী হয়ে ওঠবার সফরটা কীভাবে ব্যাখা করবে?
অঙ্কিতা: এর আগে আগে একটা ছোট্ট চরিত্রে কাজ করেছি, চার বছর ধরে মডেলিং করেছি। অনেক অডিশন দিয়েছি, সেখান থেকে স্নেহাশিসদার (চক্রবর্তী) অফিসে আসা। উনি আমার অডিশন নেন, পুরোটাই দাদার হাতে তৈরি আমি। উনি আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন, আমাকে জগদ্ধাত্রী হিসাবে গড়ে তুলেছেন। আমি যা করছি, যেটুকু পারছি সবটাই ওই মানুষটার জন্য।

সহ-অভিনেতা সৌম্যদীপ এবং প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে অঙ্কিতা, সোনার সংসারের ফাঁকে (ছবি-ফেসবুক)
শুরুতে তো অনেক ‘রিজেকশন’ সহ্য করেছেন। শোনা যায়, একটা প্রোজেক্টের জন্য নাকি আপনি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েন। তাই তো?
অঙ্কিতা: ঠিকই শুনেছেন। আমি একদম শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ি। পরেরদিন শ্য়ুটিং শুরু, আগের দিন ফোন করে জানতে পারলাম আমি বাদ। বলা হল, তুমি ওই চরিত্রটা করছো না। খুব খারাপ লেগেছিল। আমার মনে একটা আশা ছিল, নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম সেইভাবেই। মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম, হঠাৎ করে কোথা থেকে কী হয়ে গেল…. তখন ভেবেছিলাম আর চেষ্টাই করব না, অডিশন দেওয়া ছেড়ে দেব। তবে যা হয় সেটা ভালোর জন্য। সেই সিরিয়ালটাও এখনও চলছে। আমি খুশি যে আমি ওই চরিত্রটা পাইনি, সেইজন্যই জগদ্ধাত্রী হতে পেরেছি। ওই ঘটনা থেকে আমি এটাই শিখেছি জীবনে যা কিছু ঘটে তা ভালোর জন্য।
একই অঙ্গে দুই রূপ-- জ্যাস আর জগদ্ধাত্রী। কত বড় চ্যালেঞ্জ কেরিয়ারের শুরুতেই দুটো ভিন্নধর্মী ভূমিকা একই সিরিয়ালে তুলে ধরা?
অঙ্কিতা: গল্পটাই এইরকম। দাদা প্রথমদিন বলেছিল আমরা এমন কিছু করতে চলেছি তা বাংলা টেলিভিশনে কেউ দেখেনি। সত্যিই তাই, জগদ্ধাত্রীর মতো চরিত্র মানুষ আগেও দেখেছে। কিন্তু জ্যাসের মতো চরিত্র বাংলা টেলিভিশনে কেউ দেখেনি। তবে হয়ত আগামিতে আরও আসবে। আমার মনে হয় সবকিছুরই একটা নতুন প্যাটার্ন আসা উচিত। এটাও তেমনই একটা গল্প। আমাদের যখন শ্যুটিং হয়, ফাইট মাস্টার আসেন। উনি সবটা দেখিয়ে দেন। সেই মতোই ফাইট সিকুয়েন্সের শ্যুটিং হয়।
ছোটবেলায় অঙ্কিতা কেমন ছিল, মারকুটে না শান্তশিষ্ট?
অঙ্কিতা: আমি ভীষণ শান্তশিষ্ট ছিলাম। একদমই মারকুটে ছিলাম না। খেলাধূলাও তেমন করিনি। সবটাই অভিনয়ের সুবাদে শেখা।
অভিনয়ের জগতে আসার ক্ষেত্রে পরিবার কতটা সাপোর্ট করেছে?
অঙ্কিতা: শুরুতেই আমাকে সকলে খুব সাপোর্টিভ। মা-বাবা, কেউ বাধা দেয়নি কোনওদিন। বলেছে তুই যেটা করতে চাইবি, যা ইচ্ছে সেটাই কর। ওঁনারা আমার পাশে সারাক্ষণ থেকেছেন।
বৃহস্পতিবারের টিআরপি কতটা ভাবায় অঙ্কিতাকে?
অঙ্কিতা: টিআরপি অনুপ্রেরণা জোগায়, তবে আমি কিন্তু টিআরপি চার্টের অপেক্ষা করি না। ভগবানের আর্শীবাদে শুরু থেকেই আমরা ভালো ফল করছি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের ভালোবাসা বেড়েছে। প্রত্যেকটা চরিত্রের সম্পর্কে সবার এত আগ্রহ, সেটা কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় আমাদের।
স্বয়ম্ভূর সঙ্গে রসায়ন তো পর্দায় হিট, অফ-স্ক্রিনে কতটা বন্ধুত্ব গড়াল?
অঙ্কিতা: শুরু থেকেই আমাদের সবার দারুণ বন্ডিং। আমরা তো সবাই একই বয়সের। সকাল থেকে একসঙ্গে থাকা, খাওয়া-দাওয়া আর কাজ। তাই বন্ধুত্ব তো গড়ে উঠবেই। খুব ভালো বন্ধু আমরা।
জি বাংলার অন্য নায়িকাদের মধ্যে কার সঙ্গে অঙ্কিতার বন্ধুত্ব খুব মজবুত?
অঙ্কিতা: যখনই জি বাংলার কোনও শো হয় আমাদের সবার দেখা হয়, আলাপ-পরিচয় হয়। কিন্তু সবার সঙ্গে আমার ব্য়ক্তিগত চেনা-জানা তেমন নেই, ওই হাই-হ্যালোর সম্পর্ক রয়েছে বলতে পারেন। আমি সকলকে অনেক শুভকামনা জানাই। সবাই ভালো থাকুক, ভালোভাবে কাজ করুক এটাই চাই।
ফ্যানেদের মধ্যে প্রিয় নায়িকাদের নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় এত ঝগড়াঝাটি, রেষারেষি-- ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়টা কীভাবে দেখেন?
অঙ্কিতা: যে পরিমাণে গোটা বিষয়টা সেটা হওয়া উচিত নয়। আমার হয়ে যদি কেউ ভালো কথা বলেন শুধু ভালোটুকুই বলুন। অন্যকে খারাপ না বলে, ছোট না করে ভালোটুকুই শুধু বলা যায়। তুলনার মধ্যে যখনই খারাপ চলে আসে, বিষয়টা টক্সিক হয়ে যায়। কারুর প্রশংসা করলে তাঁর তো ভালো লাগবেই তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে এমন কিছু না বলা, যেটা অন্য কারুর খারাপলাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।