আরজি কর কাণ্ডের জেরে উত্তাল শহর কলকাতা। এই ঘটনার প্রভাব দেখা গিয়েছে বাংলা ছবিতেও। অনেকাংশেই কমেছে বাংলা ছবির ব্যবসা। রাজ্যে বেশ ভাল ব্যবসা করেছে 'স্ত্রী ২'।
২০২৪-এ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু ছবি
আরজি কর কাণ্ডের জেরে উত্তাল শহর কলকাতা। 'মেয়েরা রাত দখল করো', দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদ মিছিল, তারপর নানা স্তরের মানুষ জন ও শিল্পীরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছিলেন সুবিচারের আশায়। এই দাবিতে, পথে জমায়েত এখনও অব্যহত। কিন্তু এই ঘটনায় অনেকেই টলিউডের নানা তারকাকে, নানা ভাবে কটাক্ষ করেছেন। কখনও প্রতিবাদ না করার জন্য কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। আবার কখনও তাঁদের নানা কর্ম কাণ্ড নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। ট্রোলের শিকার হয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত থেকে রচনা বন্দোপাধ্যায়রা। পাশাপাশি, অনেক দর্শকের মতে বহু তারকা নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই প্রতিবাদে সামিল হননি, তাই তাঁরা নানা পোস্ট শেয়ার করে বাংলা ছবি দেখবেন না এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আর এই সবের মাঝেই অনেকাংশেই কমেছে বাংলা ছবির ব্যবসা।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে প্রক্ষাগৃহে। যেমন- সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'পদাতিক' এবং রাজ চক্রবর্তীর 'বাবলি'। আর এই দুই ছবি একেবারে ভিন্ন স্বাদের একে-অপরের থেকে। 'পদাতিক' মৃণাল সেনের জীবন আধারে নির্মিত একটি ছবি, অন্যটি অর্থাৎ 'বাবলি' হল বুদ্ধদেব গুহর জনপ্রিয় প্রেমের উপন্যাস অবলম্বনে। দু'টি ছবি নিয়েই হল মালিকেরাও বেশ আশাবাদী ছিলেন।
কিন্তু রাজ্য, বিশেষত কলকাতা শহরের বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতি, তার জেরে দু'টির কোনও ছবি আশানুরূপ ফল করতে পারছে না। তবে এ নিয়ে নির্মাতাদের কোনও অনুযোগ নেই। তাঁদের মতে, সিনেমার থেকে এই আরজি করের ঘটনার গুরুত্ব অনেক বেশি। সেই ঘটনার নিষ্পত্তি হওয়া এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে তাঁরা মনে করেন।
তবে সমালোচক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে 'পদাতিক'। এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান বলছিলেন, 'ছবির ব্যবসা অ্যাভারেজ, কিন্তু আমরা সেটা নিয়ে এখন ভাবছি না। যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে কারও সিনেমা দেখার মানসিকতা নেই।' অন্যদিকে ছবির পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যয়ের কথায়, 'আসলে 'পদাতিক'-এর অধিকাংশ দর্শকই তো রাস্তায় নেমেছেন।' শাস্তির দাবিতে পথে নেমেছিলেন পরিচালক, প্রযোজক দু'জনেই।
অন্য দিকে, মুক্তির দিন অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসে বক্স অফিসে বেশ ভাল ফল করেছিল 'বাবলি'। সপ্তাহান্তেও ভালো ব্যবসা করেছে এই ছবি। কিন্তু সোমবার থেকে ছবির ব্যবসা একেবারে পড়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রযোজন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'এখন যা পরিস্থিতি তাতে কারও সিনেমা দেখার মানসিকতা নেই। আমাদের নিজেদেরও ইচ্ছে করছে না প্রচার করতে বা কিছু পোস্ট করতে। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সব সময়েই সফ্ট টার্গেট। আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ করলেও আমাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে, না করলেও হচ্ছে।' প্রসঙ্গত, টলিউডের প্রতিবাদী মিছিলে হেঁটেছিলেন রাজও, সঙ্গে ছিলেন ছবির নায়িকা তাঁর স্ত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। বাদ যাননি ছবির নায়ক আবির চট্টোপাধ্যায়ও।
তবে এইসব বাংলা সিনেমার সঙ্গে মুক্তি পেয়েছিল হিন্দি ছবি 'স্ত্রী ২'ও। তবে সেই ছবি কিন্তু রাজ্যে বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। গত চার দিনে শহরের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্সে হাউসফুল গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হল মালিকদের বক্তব্য, 'স্ত্রী ২'র মূল দর্শক অবাঙালি হলেও, ছবিটির নাকি বড় সংখ্যক বাঙালি দর্শকও রয়েছে। আর তাছাড়া হরর-কমেডি সাধারণত ভাল ব্যবসা করে। ছবিটি এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই কোটি টাকার উপরে ব্যবসা করেছে বলে খবর।
আর 'স্ত্রী ২'-এর ব্যবসার অঙ্কটা সামনে আসতেই খুব স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন উঠছে যে আরজি কর কাণ্ডের জন্যই কি দর্শক বাংলা ছবি বিমুখ? নাকি এই মুহূর্তে তাঁরা 'স্ত্রী ২'-এর মতো বিনোদনমূলক ছবি দেখতেই বেশি পছন্দ করছেন তাঁরা?