পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ফেলুদা' তিনি। আড্ডা টাইমসের ফেলুদা সিরিজে, ফেলু মিত্তিরের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল টোটা রায় চৌধুরীকে। বরাবরই ফিটনেস ফ্রিক অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। এর আগে টোটা জানিয়েছিলেন, তিনি ‘দার্জিলিং-এ জমজমাট’-এর শ্যুটিংয়ে নিজেই স্টান্ট করেছেন, কোনও বডি ডাবল নেননি। কারণ, অভিনেতা হিসাবে তাঁর সবকিছুই ‘রিয়েল’পছন্দ। সম্প্রতি, ফেসবুকের পাতায় পুরনো অ্যালবাম ঘেঁটে অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত 'নাচ নাগিনী নাচ রে' ছবির একটা দৃশ্য় শেয়ার করেছেন টোটা। সেখানেও নাচের দৃশ্যে খানিকটা স্টান্ট-ই করতে হয়েছিল টোটাকে। সেসময় মুম্বই থেরে আসা কোরিওগ্রাফার, ওমপ্রকাশও টোটার কাণ্ডে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। লম্বা পোস্টে সেই অভিজ্ঞতাই জানিয়েছেন অভিনেতা। যেটা আবার শেয়ার করেছেন পরিচালক সৃজিত।
টোটা লিখেছেন, 'রবিবার সকাল। স্তূপীকৃত পুরনো ফাইলগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে দৈবাৎ এই ছবিটা হাতে এলো এবং স্মৃতিমেদুরতা উস্কে দিল। এটি 'নাচ নাগিনী নাচ রে' চলচ্চিত্রের স্থিরচিত্র। সেই সময়ে ছবিটি বক্স অফিসে বেশ বড় মাপের সাফল্য লাভ করেছিল। পরিচালনায় ছিলেন প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকার এবং সুপারহিট ডিরেক্টর, শ্রী অঞ্জন চৌধুরী। গানের শুটিং চলছিল জোকা ছাড়িয়ে একটি রিসর্টে। নৃত্য নির্দেশনায় ছিলেন মুম্বাইয়ের কোরিওগ্রাফার, ওমপ্রকাশ। মজাদার, হাসিখুশি মানুষ এই ওম'জি। ভালই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর মনে হলো যে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা নায়িকার, অর্থাৎ চুমকি চৌধুরীর, মাথার ওপর দিয়ে যদি গোলকিপারের মত ডাইভ্ মেরে শরীরটা শূন্যে ভাসিয়ে দিয়ে হাতের ওপর পড়েই ডিগবাজি খেয়ে উঠে দাঁড়াই তাহলে নাচটার জমে দই হওয়ার একটি প্রভূত সম্ভাবনা রইবে। এদিকে অঞ্জনদা সেদিন অনুপস্থিত। তাঁর তিন সুযোগ্য সহকারী হরোদা, সুভাষদা ও শ্যামাদা এই প্রস্তাবে নিমরাজি। হরোদা ফিসফিস করে বলে গেলেন, 'ডাইভ্ মারিস না। আশেপাশে হাসপাতাল নেই!' আমি তখন দোটানায়। একদিকে, নির্দেশকের নির্দেশ পালন করাই আমার ধর্ম। অন্যদিকে, টানা শুটিং চলবে, সত্যিই যদি চোটজনিত কারণে শিডিউল ভেস্তে যায় তাহলে প্রযোজককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে এবং সেটার জন্য মূলত আমাকেই দায়ী করা হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু পরিচালকই প্রযোজক সেহেতু সহকারীরাও বেঁকে বসেছেন। হতাশ হয়ে ওম'জি বললেন, 'থাক, এসব এখানে কেউ করতে পারবে না। এটা অক্ষয় কুমার হলে এক কথায় করে দিত।' ব্যাস, যজ্ঞাগ্নিতে পোয়াটাক ঘি। আমিও দপ্ । তার মানে বাঙালিরা পারে না? রোখ চেপে গেল। শট আমি দেবই। এবং সবার মানা সত্ত্বেও দিলাম। ওম'জি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, ' কেয়া বাত রাজা, সুপার্ব।' গলায় আরোপিত তাচ্ছিল্য এনে বললাম, 'পারফেক্ট নহি হুয়া ওম'জি, ফির সে করতে হ্যায়।' হাঁ করে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। আমিও পরপর শট্ দিয়ে গেলাম যতক্ষণ না উনি সর্বসমক্ষে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে বম্বের মানদণ্ডেও স্টান্ট'টি নিখুঁত হয়েছে। তারপর বিনীত ভাবে ওনাকে গিয়ে বললাম যে আমাকে দেখে অনেকেই একটু আন্ডার-এস্টিমেট্ করে থাকেন কিন্তু বিশ্বাস করুন স্যার, আমিও পারি।'