রাত পোহালেই চতুর্থ দফার ভোট তিলত্তমায়। জেলার গ্রামগঞ্জ ঘুরে ভোট এবার বৃহত্তর কলকাতার একাংশে হতে চলেছে। যাদবপুর, কসবা, টালিগঞ্জ, বেহালা ও মেটিয়াব্রুজ - এই পাঁচটি এলাকা খাতায় কলমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় হলেও দীর্ঘদিন ধরেই তা কলকাতা পুরসভার আওতায় রয়েছে। তাই এই সব এলাকাগুলোকে কলকাতার ভিতরেই ধরা হয়। সেই হিসেবে শনিবারই কলকাতার বুকেই চলতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হতে চলেছে। আর সেই ভোটগ্রহণ যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেজন্যে আগেভাগেই নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি কোমর বেঁধে নেমেছে কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসনও। শনিবার সকাল থেকে কলকাতার মোট ২৫টি থানা এলাকায় ভোটগ্রহণ করা হবে। সেজন্য ভোটপর্ব নির্বিঘ্নে উতরে দিতে বেশিরভাগ দায়িত্ব পুলিশের উপরেই পড়েছে। ভোটপর্বে যাতে কোনও ধরনের অশান্তির ঘটনা না ঘটে বা ঘটলেও যাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার সৌমেন মিত্র। সেই বৈঠকেই তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আগামিকাল ভোটের সময় সামান্য গোলমালের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে যেন পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছে যায়। প্রতিটি থানা এলাকায় যাতে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন হয়, তার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেন পুলিশ কমিশনার। সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়ে দেন যে, প্রতিটি ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ীই নিতে হবে। ভোটের দিন রাস্তায় নামানো হচ্ছে প্রায় ৪,৫০০ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ। রাস্তায় থাকছেন ৩৩ জন ডেপুটি কমিশনার। এছাড়াও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরাও রাস্তায় থাকবেন। আকাশপথেও চলবে নজরদারি। একাধিক জায়গায় উড়বে ড্রোনও। এছাড়াও পুলিশের পদস্থ কর্তারাও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবেন। ভোটের সময় অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে এলাকাজুড়ে টহল দেবে মোট ১২৩টি সেক্টর মোবাইল ভ্যান, ২৫টি ও তার সঙ্গে আরও ১২টি হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড। এছাড়াও ৫০টি টহলদার বাইক থাকবে। আরও ৬টি ডিভিশনাল ও একটি লালবাজারের স্ট্রাইকিং বাহিনী থাকছে। প্রতিটি স্ট্রাইকিং বাহিনীর টহলদার গাড়িতে থাকছেন ২০ জন করে পুলিশকর্মী ও আধিকারিক। ৯৪টি কুইক রেসপন্স টিমে টহল দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাদের সঙ্গে থাকবেন কলকাতা পুলিশ আধিকারিকরাও। যেখানে ভোট হচ্ছে, সেই এলাকার অপরিসর রাস্তা ও ভোটকেন্দ্রের আশপাশেও কেন্দ্রীয় বাহিনী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে টহল দেওয়া হবে। এখন থেকেই বহিরাগতদের আটকাতে ৪০টি প্রবেশ ও বেরনোর রাস্তায় শুরু হয়েছে নাকা চেকিং। বিভিন্ন রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রুট মার্চও শুরু করেছে। ভোটের আগেও কোথাও কোনও গোলমাল যাতে না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।এদিকে কলকাতার বুকে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্ব যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই শহরে ১০২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পাঠিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই বাহিনীর একটা বড় অংশকেই কাজে লাগানো হবে শনিবারের ভোটে। বাকি অংশ কলকাতার বিভিন্ন অংশে রুট মার্চ করবে। ভোটকেন্দ্রগুলিতে মোতায়েন করা থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী।শনিবার শহরের ৭২১টি ভোটকেন্দ্রের ২ হাজার ৩৪৩টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। যে এলাকায় ৯টি বা তার বেশি সংখ্যক বুথ রয়েছে, সেখানে মোতায়েন করা হচ্ছে দুই সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী, পাঁচটি ও তার বেশি বুথ থাকলে দেড় সেকশন ও দুই থেকে চারটি বুথ কোনও ভোটকেন্দ্রে থাকলে, এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।