উত্তরবঙ্গ পৌঁছে কেন্দ্রীয় বাজেটের তুমুল সমালোচনা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিকেলে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় বাজেটকে ‘ভেকধারী সরকারের ফেকধারী বাজেট’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। সঙ্গে বলেন, দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে এই সরকার। এদিন মমতা বলেন, ‘তোমরা আবার কী করবে? আমরা তো করে দিয়েছি। সবটাই রেডি আছে। নতুন করে কলকাতা শিলিগুড়ি কী করবে? বাঙালকে হামাগুড়ি শেখাচ্ছো’? রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে মমতার দাবি, ‘৩,২০০ কোটি টাকার অলরেডি করিডর হচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে গেছে। কুচবিহারে আমরা এয়ারপোর্ট কানেকটিভিটি করে দিয়েছি। মালদায় করে দিয়েছি, বালুরঘাটে করে দিয়েছি। আমি আসামকে ভালবাসি। তোমরা আসামে প্লেন চালাতে পারলে কোচবিহারে কেন চালাও না? পাঁশকুড়া থেকে বর্ধমান হয়ে আরও একটা পথে দক্ষিণ বঙ্গ – উত্তরবঙ্গকে জোড়া হচ্ছে’।কেন্দ্রীয় বাজেটকে জনবিরোধী অখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে একটা বাজেট করেছে। আবার দাম বাড়বে। তৈরি থাকুন। পেট্রোলে আড়াই টাকা, ডিজেলে ৪ টাকা সেস বসিয়েছে। সেস আপনাদের শেষ করে দেবে। সেসের টাকা রাজ্য সরকার পায় না। টোটাল দিল্লি তুলে নিয়ে চলে যায়। একেবারে জিজিয়া করের মতো এই টাকাগুলো তুলে নিয়ে চলে যায়। পেট্রোলের দাম বাড়া মানে রান্না ঘরে আগুন লাগা। আবার বাড়ালো....’এর পরই কেন্দ্রীয় সরকারকে চরম আক্রমণ করেন তিনি। বলেন, ‘কী করে করেছে বাজেট। ভগবান জানে। এতো আমার মনে হয়। ভেকধারী সরকারের ফেকধারী বাজেট। সব বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেক ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যাঙ্কে টাকা রাখুন। সব খেয়ে চলে যাবে। কোনদিন সকালে উঠে শুনবেন, নোটবন্দির মতো ব্যাঙ্কও বন্দি করে দিয়েছে। ব্যাঙ্কে টাকা নেই’। বাজেটে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘বাজেটে বলেছে ইন্সিওরেন্সের ৭৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হবে। তার মানে আপনারা গেলেন। আপনি টাকাটা পাবেন কি?’বেসরকারি করণেরও বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, ‘হুক্কাহুয়া প্রোজেক্ট। রেল প্রাইভেটাইজেশন, BSNL টোটাল প্রাইভেটাইজেশন। এয়ার ইন্ডিয়া টোটাল প্রাইভেটাইজেশন। যত PSU আছে সব প্রাইভেটাইজেশন। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরেদের কারও চাকরি সুরক্ষিত নয়। কারণ সব বিক্রি করে দিচ্ছে’। রাজ্যে রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ দরকার নেই বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় রাস্তা বানানোর দরকার নেই। যাও কৃষকরা বসে আছে এই টাকাটা কৃষকদের দেও। আবার বলছে রুরাল রোড বানাবো। কোনও প্রয়োজন নেই। আমি সব করে দেবো’।মমতা বলেন, ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট পেপারলেস বাজেট। মানে পেপারে আর আপনি দেখতে পাবেন না। ওটা কোথায় লুকিয়ে রেখে দেবে চুপচাপ করে। ওই মালপোয়ারা রেখে দেবে’।বিজেপিকে মমতার প্রশ্ন, ‘দেশটাকেই বিক্রি করে দিয়েছে বন্ধু। একটু ওদের বিক্রি করে দিন না। ওদের বলুন কত টাকা দিলে যাবে? আর কত টাকা লাগবে তোমাদের?’ এদিন দলত্যাগীদের ডাকাত বলে মমতা বলেন, ‘মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কাররা আসলে তোমাদের টাকা থাকে না ট্রেনের টিকিট কাটার আর যারা কোটি কোটি টাকা চুরি ডাকাতি করেছে তাদের চার্টার্ড প্লেনে করে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছো?’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি বাজেটে ‘সাধারণ মানুষ সম্পূর্ণ উপেক্ষিত, কৃষকবিরোধী। সাধারণ মানুষের জন্য কিচ্ছু নেই। আনঅর্গানাইজড সেক্টরের জন্য কিচ্ছু নেই। সব বিক্রি করে দিয়ে কবে যে এরা দেশ ছেড়ে পালাবে জানি না। আমি অনেক সরকার দেখেছি। কিন্তু এরকম একটা ভিন্ডিক্টিভ সরকার, যারা মানুষের ক্ষতি করে দেশটাকে পুরো বিক্রি করে দিতে চায় তারা কী করে দেশপ্রেমের কথা বলে?’ প্রশ্ন মমতার।