আমাদের দেশের রাজনীতিতে জাতপাতের একটা বড় অঙ্ক কাজ করে। যে আসনে যে জাতির লোক বেশি, সাধারণত সেই আসনে সেই জাতির প্রার্থী দাঁড় করাতে চায় রাজনৈতিক দলগুলি। বিগত বছরগুলিতে অভিযোগ উঠেছে, দেশের ক্ষমতা উচ্চবর্ণের হাতেই কুক্ষিগত। তবে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন ওবিসি জনজাতিভুক্ত ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘদিন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। তবে সার্বিক ভাবে ভারতের ইতিহাসে এবং বর্তমানে কতজন মুখ্যমন্ত্রী আছেন যারা ওবিসি জাতিভুক্ত?
১৯৫২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশের ২১টি বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের জাতিভিত্তিক ডেটাবেস তৈরি করেছে হিন্দুস্তান টাইমস। তবে এর আগে বুঝতে হবে যে ভারতে 'অবিসি' বা অনগ্রসর শ্রেণির বহু প্রকারভেদ রয়েছে। একটি জাতি এক রাজ্যে ওবিসি হতে পারে, অন্য রাজ্যে তা নাও হতে পারে। আবার একটি ওবিসি-ভুক্ত জাতির মধ্যেও পৃথক ভেদ থাকতে পারে। তার মধ্যে কোনওটা আবার উচ্চবর্ণ হতে পারে। এই সমীক্ষায় দিল্লি সহ ২০টি বড় রাজ্যকে নেওয়া হয়েছে। মণিপুর, সিকিম, মিজোরাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, গোয়া, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে বাদ দেওয়া হয়েছে এই সমীক্ষা থেকে।
এই সমীক্ষায় হিন্দুস্তান টাইমস মোট ৪৭১ জন মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে খতিয়ে দেখেছে। তা থেকে জানা গিয়েছে, ভারতের ইতিহাসে ৭০.৩ শতাংশ মুখ্যমন্ত্রী জেনারেল ক্যাটাগোরির ছিলেন। তাঁরা না ওবিসি, না তফসিলি জাতি বা উপজাতিভুক্ত ছিলেন। এই ডেটাবেসে থাকা মুখ্যমন্ত্রীদের মাত্র ২২.৭ শতাংশ ওবিসি জনজাতিভুক্ত। এদিকে তফসিলি জাতির মুখ্যমন্ত্রী মাত্র ২.৫ শতাংশ। এই ডেটাবেসে থাকা ৪৭১ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মাত্র ১২৯ জন (বর্তমানে পদে থাকা মুখ্যমন্ত্রীরা অন্তর্ভুক্ত) পুরো পাঁচবছরের মেয়াদ পূরণ করেছেন। মেয়াদ পূরণ করা মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ৬৮.২ শতাংশই জেনারেল শ্রেণির। এদিকে ওবিসি মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূরণ করা নেতা হলেন ২৭.৯ শতাংশ। আর মায়াবতী দেশের একমাত্র দলিত মুখ্যমন্ত্রী যিনি পুরো পাঁচবছরের মেয়াদ পূরণ করেছেন। এদিকে এই ডেটাবেসে যেহেতু উত্তরপূর্বের ছোট রাজ্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই তফসিলি উপজাতির উল্লেখ এখানে নেই।
এদিকে দেশে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী ছিল ২০০৯ সালে। সেই বছরের ১৬ অক্টোবর। দেশের মধ্যে ওবিসি মুখ্যমন্ত্রীদের হার ৪৪.৪ শতাংশ হয়েছিল। এর আগে ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ দশক পর্যন্ত অবশ্য ওবিসি মুখ্যমন্ত্রীর হার খুবই কম ছিল। ১৯৮০-র দশক থেকে তা ধীরে ধীরে বাড়তে শুর করেছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের মে পর্যন্ত দেশে ওবিসি মুখ্যমন্ত্রীর হার ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল। যা ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বর্তমানে এই হার ৩৩ শতাংশের কাছাকাছি।
দেখা গিয়েছে, যে সব রাজ্যে ওবিসি জনসংখ্যা বেশি, সেখানেই ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে তা সত্ত্বেও সার্বিক ভাবে দেশের ওবিসি জনসংখ্যার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর হারের সামঞ্জস্য নেই। দেশে সার্বিক ভাবে ওবিসি জনসংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। তবে এক এক রাজ্যে ওবিসি জনসংখ্যা এক এক রকম। যেমন তামিলনাড়ুতে ওবিসি জনসংখ্যা সর্বোচ্চ ৬৮.২ শতাংশ। এছাড়া তেলাঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরলের মতো দক্ষিণী রাজ্যেও ওবিসি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের ওপরে। এদিকে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশেও ওবিসি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। এদিকে পঞ্জাবে ওবিসি জনসংখ্যা মাত্র ১৩.৮ শতাংশ, হিমাচলে তা ১৫.৮ শতাংশ, বাংলায় তা ৬.৮ শতাংশ। এদিকে বাংলার পড়শি রাজ্য ওড়িশায় ওবিসির সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। তবে মাত্র ১৯৭৭ সালে একবারই ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী (নীলমণি রুত্রে) পেয়েছিল এই রাজ্য। এদিকে কর্ণাটক এবং বিহারের মতো রাজ্যে একাধিক ওবিসি মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন।