রাজ্য-রাজনীতিতে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছিল সিঙ্গুর। ২০২১ সালের রাজ্যের পালা বদলেও প্রধান ভূমিকা নেয় সিঙ্গুর আন্দোলন। সেই সিঙ্গুর কি এবার লোকসভা নির্বাচনে কোন ফ্যাক্টর হতে পারে? উত্তরটা অবশ্যই এক কথায় না হবে।
গত ১৫ বছরে হুগলি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। অনিচ্ছুক-ইচ্ছুক চাষীরা জমি ফিরে পেয়েছেন। কারখানার মাঠে থেকে টাটার না হওয়া গাড়ি কারখানার ‘ধ্বংসাবশেষ’ সরিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। ইতিউতি জমিকে চাষযোগ্য করে কৃষিকাজ করছেন কেউ কেউ। তবু ফিনিক্স পাখীর মতো ভোট এলেই মাথা চাড়া দেয় সিঙ্গুর বিতর্ক। স্থানীয় স্তরে হলেও, টাটার কারখানা হওয়া উচিত ছিল কি ছিল না, চলতে থাকে সেই তর্ক।
আরও পড়ুন। টাটার জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ১৬ লাখ টাকা প্রতি একরে, সেই সিঙ্গুরে জমির দাম কত?
ভোটের বাজারে সিঙ্গুরের হাল হকিকত বুঝতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। কান পাততেই শোনা গেল টাটার কারখানা নিয়ে আলোচনা। সানা পাড়া ঢোকার কালভার্টের মুখে রয়েছে একটি চায়ের দোকান। সেই চায়ের দোকানে আলোচনা চলছে ভোট নিয়ে। সেই আলোচনা কিছু গড়াতেই উঠে এল টাটার কারখানা প্রসঙ্গ। বিবিধ মত। সবটাই গুলিয়ে গিয়েছে। কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু দাবি করে উঠতে পারছেন না। কখন বলছেন জমি ফেরত পেয়ে ভালই হয়েছে, আবার কখনও আলোচনার মোড় ঘুরছে কারখানা তৈরির পক্ষে।
এই সানা পাড়া একটা সময় ছিল সিপিএমের দখলে। এখানেই জোর করে জমি দখলের প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন। 'টাটার মাঠে' দাঁড়িয়ে মানতের বট গাছ, লাল সুতোর ফাঁকে লুকিয়ে সিঙ্গুরের কোন কামনা?
আরও পড়ুন। NH2 হয়ে ছুটবে স্বপ্ন? টাটাকে 'জমি না দেওয়া' সিঙ্গুর তাকিয়ে NHAI'র প্রকল্পের দিকে
হুগলির সিপিএম প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ। ঘটনাচক্রে আমরা যেদিন গিয়েছি, সেদিন ওই এলাকায় প্রচার সেরেছেন তিনি। তবে চারপাশের ব্যানার হোডিং সমারোহ বা মানুষের মধ্যে আলোচনা বলে দিচ্ছে, সিঙ্গুরে লড়াইটা আসলে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে। সেখান আবার উল্লেখযোগ্য ভাবে তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার-কাটআউটের সংখ্যা বেশি। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখা মিলল না সেভাবে। কারণটা জানালেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা। তাঁর কথায়, ‘আসলে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সকলের পরিচিত মুখ। তাই তাঁর ছবিকে সামনে রাখা হয়েছে।’
উল্টো দিকে গোটা সিঙ্গুর ঘুরলে হাতে গোনা লকেটের ছবি দেওয়ার ব্যানার মিলবে। সেই জায়গায় কাটআউট ব্যানারে রয়েছেন মোদী। সানা পাড়ায় ওই চায়ের দোকানের অদূরেই গলির মোড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যানার-কাটআউট। সেই কাটআউটে রয়েছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় আর উল্টো দিকে মোদী।
চায়ের দোকানে আলোচনার মোড় বদলেছে। আলোচনায় চলে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি। চাকরিহারা শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা কী রকম তা নিয়ে চর্চা চলছে। তবু আবার আলোচনায় চলে আসছে টাটার জমি প্রসঙ্গ।
চায়ের দোকানের অদূরে এনএইচ ২-কে ছয় লেন করার কাজ চলছে। জাতীয় সড়ক ছয় লেনের হলে কী বদলে যাবে সিঙ্গুরের মানচিত্র? আবার কী কারখানা হবে টাটার না হওয়া কারখানার জমিতে? তবে আগের মতো ওই জমি সবুজ ফসল ফলবে তেমনটা আশা করেন না কেউ। প্রথমত জমি তৈরি করাই একটা বিপুল খরচ। একমাত্র সরকারই পারে সার্বিক ভাবে জমি তৈরি করে দিতে। তাছাড়া সার এবং চাষের অনুষাঙ্গিক দ্রব্যের বিপুল দাম বেড়েছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে চাষের বাইরে থাকায় একটা প্রজন্মের চাষের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। তাঁরা অন্যত্র কেরিয়ার করতে ব্যস্ত হয়েছে। তবে কি আবার কারখানা হবে?
আলোচনায় বারবার কারখানার জমির প্রসঙ্গ আনছিলেন এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি। তিনি সুদূর প্রসারী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন চায়ের দোকানের পাশে রাস্তায়। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মোদীর জোড়া কাটআউটের দিকে।
আরও পড়ুন। ন্যানো তো বন্ধ, তাও সানন্দে আছে কোকাকোলা, মাইক্রন; সিঙ্গুরে শুধুই হতাশা!